উত্তরবঙ্গের প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ভূমিধস ও সেতু ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার দার্জিলিংয়ে সেতু ধসের ঘটনায় একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় শোকজ্ঞাপন করে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, কেন্দ্র সরকার সবরকম সাহায্য করবে।
এক্স (X)-এ পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “দার্জিলিংয়ে সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীরভাবে ব্যথিত। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি রইল আন্তরিক সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।” তিনি আরও জানান, প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে দার্জিলিং ও সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রবল বর্ষণে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় ভূমিধস, জলাবদ্ধতা ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুরসিয়ং রোডের দিলারামে ভূমিধসের পর সাতটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও দুই জন নিখোঁজ রয়েছেন।
পথ যোগাযোগ ব্যাহত, চলছে উদ্ধার অভিযান:
কুরসিয়ং রোডের দিলারাম এলাকায় ভূমিধসের জেরে দার্জিলিং যাওয়ার মূল রাস্তাটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। রোহিণী রোডেও গৌরীশংকর এলাকায় ভূমিধসের কারণে যান চলাচল বন্ধ। পাঙ্খাবাড়ি রোডের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। শুধুমাত্র তিন্দারিয়া রোড চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে পর্যটক ও স্থানীয়দের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কুরসিয়ং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় বলেন, “৭টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আরও দুই জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁদের দেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। দিলারাম এলাকায় ভূমিধসের ফলে কুরসিয়ং রোড বন্ধ হয়ে গেছে। রোহিণী রোডেও গৌরীশংকরে ভূমিধস হয়েছে। পাঙ্খাবাড়ি রোডের অবস্থা খারাপ। তিন্দারিয়া রোডে আপাতত যান চলাচল সম্ভব হচ্ছে। মিরিকের সমস্ত পর্যটককে আগামী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন্দারিয়া রোড দিয়ে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।”
উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (NDRF) একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। দার্জিলিং-মুখী সড়ক SH-12-এর দুধিয়া লোহার সেতুর একটি অংশ ধসে পড়ায় সড়ক পরিবহণও বন্ধ রাখা হয়েছে।
জলপাইগুড়িতে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবন:
জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের পোরাজহর এলাকায় অতিবৃষ্টিতে জলস্তর হঠাৎ বেড়ে গিয়ে মহনন্দা নদীর একটি বাঁধ ভেঙে পড়ে। এর ফলে বহু বাড়ি ও কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেককেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসের কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। দার্জিলিং, কুরসিয়ং ও সংলগ্ন এলাকায় উদ্ধারকাজ জোরদার করা হয়েছে। পর্যটকদেরও যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় প্রশাসন পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। আবহাওয়া দফতর আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে, ফলে প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।