শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর খুন ইস্যুতে তীব্র কূটনৈতিক সংঘাতে কানাডা ও ভারত। দুই দেশই নিজেদের দেশ থেকে অন্য দেশের ছয় জন করে কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। নিজ্জর নিষিদ্ধ খালিস্তানপন্থী হিসেবে ভারতে চিহ্নিত। ২০২৩ সালে তাকে খুন করা হয় কানাডায়। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর (Justin Trudeau) দাবি, নিজ্জর হত্যায় ভারত জড়িত।
তিনি বলেছেন, সার্বভৌম কানাডার মাটিতে হামলায় কূটনীতিক এবং এজেন্ট ব্যবহার ভারতের মস্ত বড় ভুল।
DW News (ডয়েচভেল) জানাচ্ছে, কানাডা সরকারের অভিযোগ, এক বছর আগে শিখ নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের ঘটনায় যে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত ছিল সেটি এখন স্পষ্ট। তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের এই কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রমাণ হাতে আসার পরেই ছয় ভারতীয় কূটনীতিককে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় কানাডার প্রশাসন। DW News আরও জানাচ্ছে, খালিস্তান অর্থাৎ, আলাদা শিখ রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলনকারী হরদীপ কানাডার নাগরিক ছিলেন। গত বছর ভ্যাঙ্কুভারে তিনি খুন হন। প্রাথমিক তদন্তের পর তখনই কানাডা জানিয়েছিল, এই ঘটনার পিছনে ভারতীয় এজেন্টদের হাত আছে।
নিজ্জর খুনের তদম্ত রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশ নেয়। সোমবার (১৪ অক্টোবর) তারা জানিয়েছে, ওই ঘটনায় এবং ওই ধরনের আরো বেশ কিছু ঘটনায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ভারতের সাথে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না তিনি। কিন্তু তার সিদ্ধান্তকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়৷
তার মতে কানাডায় নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন আছে। ট্রুডো বলেছেন, ”সার্বভৌম কানাডার মাটিতে হামলার ঘটনায় কূটনীতিক এবং এজেন্টদের ব্যবহার করে ভারত মস্ত বড় ভুল করেছে।” তিনি বলেছেন, ”রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশের তদন্তে স্পষ্ট ওই ঘটনায় ভারতীয় কূটনীতিক এবং এজেন্টরা যুক্ত ছিল।”
ট্রুডো আরও জানিয়েছেন, কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া তার প্রথম এবং প্রাথমিক কর্তব্য।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা তার কাজ। অন্য কোনো দেশ তার দেশে এসে হত্যার ঘটনা ঘটাবে, তা তিনি কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। কানাডায় বিপুল সংখ্যায় শিখ ধর্মাবলম্বীদের বংশ পরম্পরায় বসবাস। তাদের সিংহভাগ কানাডীয় নাগরিক। বিভিন্ন সময় ভারতসহ অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানপন্থী সংগঠন খুবই সক্রিয়।
পাকিস্তান মদতপুষ্ট খালিস্তানি জঙ্গি নেতারা কানাডায় প্রকাশ্যেই ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড করে। নিহত শিখ নেতা নিজ্জারকে ভারত সরকার ২০২০ সালে জঙ্গি ঘোষণা করে। নিউ ইয়র্কের সভায় এ কথা মনে করিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, যা একটি সমস্যা সৃষ্টি করছে, আর আমাকে সরকারপক্ষ হিসাবে যদি কেউ নির্দিষ্ট কিছু জানান, তবে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখব৷’’
কানাডা সরকারের দাবি, কানাডীয় শিখ নেতা নিজ্জর খুনে জড়িত কারা সেই প্রমাণ ভারত সরকারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। ভারতের তরফে বলা হয়েছে, কানাডার মন্তব্য ভিত্তিহীন। ভারত বার বার তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ চেয়েছে। কিন্তু কানাডা এখনো পর্যন্ত তা দিতে পারেনি। রাজনৈতিক কারণে কানাডা এই মন্তব্য করছে বলেও অভিযোগ করেছে ভারত।