প্রধানমন্ত্রী (pm) পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার (২২ এপ্রিল ২০২৫) পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে, বেশ কয়েকটি রাজ্যকে ৭ মে ২০২৫, বুধবার, “শত্রুদের আক্রমণের ক্ষেত্রে কার্যকর বেসামরিক প্রতিরক্ষার” জন্য নিরাপত্তা মহড়া পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। এনডিটিভি’র সূত্র অনুযায়ী, এই ধরনের মহড়া সর্বশেষ ১৯৭১ সালে পরিচালিত হয়েছিল, যে বছর ভারত ও পাকিস্তান দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধে জড়িয়েছিল। এই নির্দেশের সময় গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দুই দেশের মধ্যে বর্তমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত ব্যবস্থা (pm)
গৃহ মন্ত্রণালয় (MHA) রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে এয়ার রেইড সতর্কীকরণ সাইরেনের কার্যকরীকরণ সংবেদনশীল এলাকায় যুদ্ধ সাইরেন কার্যকর রয়েছে তা নিশ্চিত করা। বেসামরিক নাগরিক ও ছাত্রদের প্রশিক্ষণ শত্রুদের আক্রমণের সময় নিজেদের রক্ষার জন্য বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
সম্ভাব্য বিমান হামলার সময় শহর ও গ্রামে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার পরীক্ষা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার প্রাথমিক ছদ্মবেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিকে শত্রুদের বোমা হামলা থেকে রক্ষার জন্য কেমোফ্লেজের ব্যবস্থা। সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার হালনাগাদ ও মহড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা পরীক্ষা ও মহড়া।
সুপার কাপে ধাক্কা খেয়ে খুদেদের হাত ধরে বড় সাফল্য জামশেদপুরের
পহেলগাঁও হামলা ও সীমান্তে উত্তেজনা
২২ এপ্রিল ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও র বাইসারান উপত্যকায় পাকিস্তান-সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা ২৬ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই হামলা ২০০৮-এর মুম্বই হামলার পর ভারতে সবচেয়ে মারাত্মক বেসামরিক হামলা হিসেবে বিবেচিত।
রাষ্ট্রসংঘ -তালিকাভুক্ত জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) প্রাথমিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছে।
হামলার পর থেকে সীমান্তে উত্তেজনা কমার কোনও লক্ষণ নেই। পাকিস্তান গত ১১ রাত ধরে লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC)-এ ভারতীয় পোস্টগুলির উপর গুলি চালাচ্ছে। ভারতও পাকিস্তানের এই বারবার সীমান্ত-উল্লঙ্ঘনের জবাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
কুপওয়ারা, বারামুল্লা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধর, নওশেরা, সুন্দরবানী এবং আখনুরের মতো এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অযাচিতভাবে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে, যার জবাব ভারতীয় সেনাবাহিনী সমানুপাতিকভাবে দিয়েছে।
পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে ব্ল্যাকআউট মহড়া
পাঞ্জাবের ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ৪ মে ২০২৫-এ রাত ৯:০০ থেকে ৯:৩০ পর্যন্ত ৩০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে একটি ব্ল্যাকআউট মহড়া পরিচালিত হয়। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের একজন আধিকারিক পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড (PSPCL)-কে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন (pm), “এই মহড়ার উদ্দেশ্য যুদ্ধের হুমকির সময় ব্ল্যাকআউট পদ্ধতির প্রস্তুতি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।” সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউটের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্যও অনুরোধ করা হয়। ফিরোজপুরের ডেপুটি কমিশনার দীপশিখা শর্মা জানিয়েছেন, এটি একটি নিয়মিত মহড়া এবং আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া (pm)
পহেলগাঁও হামলাকে ২০১৯-এর পুলওয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (pm) আজ প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং-এর সঙ্গে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন।
এর আগে তিনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মোদী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হামলার সঙ্গে জড়িত এবং এর ষড়যন্ত্রকারীরা “এমন শাস্তি পাবে যা তারা কল্পনাও করতে পারে না।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জাতিকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, “আপনারা যা চান, তা অবশ্যই ঘটবে,” যা ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। ২৯ এপ্রিল ২০২৫-এ একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে মোদী সশস্ত্র বাহিনীকে “পদ্ধতি, লক্ষ্য এবং সময় নির্ধারণে সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” দিয়েছেন।
কূটনৈতিক ও দ্বিপাক্ষিক পদক্ষেপ
ভারত (pm) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত ১৯৬০-এর ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি (IWT) স্থগিত করেছে, যা ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯-এর কার্গিল সংঘাতের সময়ও অক্ষুণ্ণ ছিল। পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে অভিহিত করে এবং জলপ্রবাহ বন্ধ করার যে কোনও প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ভারত পাকিস্তানের কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা কমিয়েছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করেছে। ২৭ এপ্রিল থেকে সমস্ত পাকিস্তানি ভিসা (চিকিৎসা ভিসা ছাড়া) বাতিল করা হয়েছে, এবং ৭৮৬ জন পাকিস্তানি নাগরিক ২৪-৩০ এপ্রিলের মধ্যে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত ত্যাগ করেছে।
ভারত পাকিস্তান থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আমদানি ও ট্রানজিট নিষিদ্ধ করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত আইএমএফ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলিকে পাকিস্তানের জন্য ঋণ ও তহবিল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ
মহড়ার নির্দেশ যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা গেলেও, এটি জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। ১৯৭১-এর পর এই ধরনের মহড়া না হওয়া সরকারের গুরুতর উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়, তবে এটি কি শুধুই প্রতিরোধমূলক, নাকি বৃহত্তর সামরিক পদক্ষেপের পূর্বাভাস? পাকিস্তানের LoC-তে গুলি চালানো এবং শিমলা চুক্তি স্থগিতের হুমকি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
ইন্ডাস ট্রিটি স্থগিত করা কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলেও, এটি পাকিস্তানের জল নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে সংঘাত বাড়াতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, যেমন রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ, সংযমের আহ্বান জানালেও, উভয় দেশের কঠোর অবস্থান শান্তিপূর্ণ সমাধানকে কঠিন করে তুলছে।
কেন্দ্রের ৭ মে মহড়ার নির্দেশ পহেলগাঁও হামলার পর উত্তেজনার মধ্যে বেসামরিক প্রতিরক্ষা জোরদার করার প্রচেষ্টা। তবে, কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপগুলি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সরকারকে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক এড়িয়ে এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার সুযোগ গ্রহণ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।