ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০২০ সালের করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গঠন করা হয়েছিল পিএম কেয়ার্স ফান্ড (PM CARES Fund)। এই তহবিলটি(PM CARES Fund) ছিল দেশের নাগরিকদের ও বিদেশি সহায়তার মাধ্যমে মহামারির মোকাবিলায় সাহায্য নেওয়ার জন্য। এক সময় যেখানে পিএম কেয়ার্স (PM CARES Fund) ফান্ডে অনুদানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৭,১৮৪ কোটি, তা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯১২ কোটি। এই বিশাল পার্থক্যকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে এবং অনুমান করা হচ্ছে, হিসেবের অস্বচ্ছতা এবং কেন্দ্রের অদৃশ্য মনোভাবের কারণে মানুষ আর তহবিলে সাহায্য করতে আগ্রহী নয়।
২০২০-২১ সালের অর্থবর্ষে, যখন ভারত কোভিড-১৯ অতিমারির তীব্রতার সম্মুখীন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতবাসীর কাছে অনুদানের আবেদন করেছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারতীয়রা এবং প্রবাসী ভারতীয়রা বিপুল পরিমাণ অনুদান দিয়েছিলেন পিএম কেয়ার্স ফান্ডে (PM CARES Fund)। বিশেষ করে বিদেশ থেকে বিশাল অঙ্কের অনুদান আসতে শুরু করে। কিন্তু তহবিলের অর্থ (PM CARES Fund) কোথায় এবং কিভাবে ব্যয় হয়েছে, সেই হিসেব জনগণের কাছে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সরকার একেবারে অনড় অবস্থান গ্রহণ করে।
এমনকি তহবিলের আয়-ব্যয়ের (PM CARES Fund) বিবরণী আদালতে দাবির পরেও, সরকার কোনও ধরনের স্বচ্ছ হিসাব দিতে রাজি হয়নি। বিরোধীরা অভিযোগ তোলে যে, পিএম কেয়ার্স ফান্ডের (PM CARES Fund) অর্থ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু এসব অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি কেন্দ্র। এরপর সরকারের চাপের মধ্যে, পিএম কেয়ার্স ফান্ড কর্তৃপক্ষ এক ওয়েবসাইটে এই তহবিলের আয়-ব্যয়ের কিছু তথ্য প্রকাশ করলেও, সেই তথ্যগুলির উপর অডিটের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয় কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (CAG)-কে। কেন্দ্র জানায়, পিএম কেয়ার্স ফান্ড(PM CARES Fund) অডিটের আওতায় আসে না, যা স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন তুলে।
২০২০-২১ সালে পিএম কেয়ার্স ফান্ডে (PM CARES Fund) যে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা হয়েছিল, তা পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে কমে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে অনুদানের পরিমাণ ১,৯৩৮ কোটি ছিল, যা গত বছর (২০২২-২৩) কমে মাত্র ৯১২ কোটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস, যা তহবিলের স্বচ্ছতার অভাব ও সরকারের অস্বচ্ছ মনোভাবের ফলস্বরূপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া, বিদেশি অনুদানও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে পিএম কেয়ার্স ফান্ডে বিদেশি অনুদান ছিল ৪৯৫ কোটি, যা পরবর্তীতে ২০২১-২২ সালে ৪০ কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা মাত্র ২.৫৭ কোটি হয়ে যায়। এই সঙ্কোচনের পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা চলছে।
প্রথমদিকে, যখন পিএম কেয়ার্স ফান্ডে বিপুল পরিমাণ অনুদান আসছিল, তখন ফান্ডের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল অনেক বেশি। তবে সময়ের সাথে সাথে তহবিলের পরিচালনার প্রতি সন্দেহ ও সরকারের স্বচ্ছতার অভাব, এর প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। অর্থের ব্যয় এবং হিসেবের প্রকাশ নিয়ে বিতর্ক ও মামলাগুলির ফলে, তহবিলটি এখন অনেকটা গণমাধ্যম ও জনসাধারণের চোখে আস্থা হারিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে পিএম কেয়ার্স ফান্ডের প্রতি জনগণের আস্থা কমছে, অন্যদিকে এর অস্বচ্ছ পরিচালনা দেশজুড়ে এক ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করছে। এর ফলস্বরূপ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি আর এই তহবিলের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন না।
পিএম কেয়ার্স ফান্ডের অর্থের হিসেব নিয়ে বিতর্কের কারণে এর অনুদানের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ২০২০ সালে বিপুল পরিমাণ অনুদান পাওয়ার পর, বর্তমান পরিস্থিতি দেখিয়ে দিচ্ছে যে, যদি তহবিলের হিসেব ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা না থাকে, তবে সাধারণ মানুষ এবং বিদেশি অনুদানকারীও আর এই তহবিলের প্রতি আগ্রহী হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক হিসাবের প্রদর্শন এবং তহবিলের ব্যবহারের স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ভবিষ্যতে পিএম কেয়ার্স ফান্ডের অবস্থা আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।