ভারতে পেট্রল ডিজেলের দাম আপাতত স্থিতিশীল

ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের (Petrol-Diesel Price) দাম আজ, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, সকাল ৬টায় সংশোধিত হয়েছে। দেশের প্রধান তেল বিপণন সংস্থা—ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), ভারত…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/petrol-diesel.jpg

ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের (Petrol-Diesel Price) দাম আজ, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, সকাল ৬টায় সংশোধিত হয়েছে। দেশের প্রধান তেল বিপণন সংস্থা—ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (বিপিসিএল) এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল)—প্রতিদিনের মতো আজও দাম প্রকাশ করেছে। গতকাল, ২১ মার্চ, দিল্লিতে পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৯৪.৭৭ টাকা এবং ডিজেলের দাম ৮৭.৬৭ টাকা।

আজকের দামে সামান্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এবং রুপির বিনিময় হারের স্থিতিশীলতার কারণে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি। এই প্রতিবেদনে দেশের প্রধান শহরগুলোতে আজকের পেট্রোল ও ডিজেলের দাম এবং এর পিছনের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হল।

প্রধান শহরে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম
দিল্লিতে আজ পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ৯৪.৭৭ টাকা এবং ডিজেলের দাম ৮৭.৬৭ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য জানাচ্ছে। মুম্বইয়ে পেট্রোলের দাম ১০৩.৫০ টাকা এবং ডিজেল ৯০.০৩ টাকা। কলকাতায় পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৫.০১ টাকা এবং ডিজেল ৯১.৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চেন্নাইয়ে পেট্রোলের দাম ১০০.৮০ টাকা এবং ডিজেল ৯২.৬১ টাকা। বেঙ্গালুরুতে পেট্রোল ১০২.৯২ টাকা এবং ডিজেল ৮৮.৯৯ টাকা। হায়দ্রাবাদে পেট্রোলের দাম ১০৭.৪৬ টাকা এবং ডিজেল ৯৫.৭০ টাকা। আহমেদাবাদে পেট্রোল ৯৫.১৯ টাকা এবং ডিজেল ৯০.১৪ টাকা। এই দামগুলো রাজ্যভিত্তিক মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং পরিবহন খরচের তারতম্যের কারণে ভিন্ন।

দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া
ভারতে ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম প্রতিদিন সকাল ৬টায় সংশোধিত হয়, যাকে ‘ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং’ বলা হয়। এই পদ্ধতি আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ভারতীয় বাজারে স্বচ্ছতা আনার জন্য চালু করা হয়েছিল। আজকের দাম নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম, যা বর্তমানে প্রায় ৮৫ ডলার প্রতি ব্যারেলের কাছাকাছি রয়েছে। এছাড়া, রুপির বিনিময় হার (প্রায় ৮৩ টাকা প্রতি ডলার), কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক, রাজ্য ভ্যাট, এবং ডিলার কমিশনও দামের উপর প্রভাব ফেলেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম গত কয়েক সপ্তাহে স্থিতিশীল রয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম গতকাল ৮৫.৫৪ ডলার প্রতি ব্যারেল ছিল, যা আজ সামান্য কমে ৮৫ ডলারের কাছাকাছি এসেছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দামও ৭৯.১৫ ডলার থেকে কিছুটা নেমেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আমেরিকার স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থেকে তেল মুক্তি এবং রাশিয়ার উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত ভারতের জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলছে। তবে, এই পরিবর্তন এখনও ভারতে বড় মাত্রায় দাম বৃদ্ধি বা হ্রাসের কারণ হয়ে ওঠেনি।

কর ও সরকারি নীতি
ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দামে প্রায় ৫৭ শতাংশই কর, শুল্ক এবং ডিলার মার্জিন হিসেবে যায়। কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক বর্তমানে পেট্রোলের উপর লিটার প্রতি ১৯.৯০ টাকা এবং ডিজেলের উপর ১৫.৮০ টাকা। এছাড়া, রাজ্য ভ্যাট রাজ্যভেদে ভিন্ন হয়—যেমন, দিল্লিতে পেট্রোলের উপর ১৯.৪০ শতাংশ এবং মুম্বইয়ে ২৬ শতাংশের বেশি। জ্বালানিকে জিএসটি-র আওতায় আনার দাবি দীর্ঘদিনের, তবে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি সম্প্রতি জানিয়েছেন, এটি রাজ্যের রাজস্বের উপর প্রভাব ফেলবে বলে এখনই তা সম্ভব নয়। আগামী বাজেটে (১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) আবগারি শুল্কে কোনো পরিবর্তন হলে দাম কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisements

জনগণের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্বালানির দাম নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। কলকাতার একজন অটো চালক, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, বলেন, “ডিজেলের দাম ৯০ টাকার বেশি হলে আমাদের রোজগারে টান পড়ে। যাত্রীভাড়া বাড়ানোরও সুযোগ নেই।” দিল্লির বাসিন্দা রেহান খান জানান, “পেট্রোলের দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি থাকলে গাড়ি চালানোর খরচ বাড়ে। সরকারের উচিত কর কমানো।” ব্যবসায়ীরাও বলছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পরিবহন খরচ বাড়ায়, যা পণ্যের দামে প্রভাব ফেলে।

অর্থনৈতিক প্রভাব
ডিজেলের দাম পরিবহন ও লজিস্টিক শিল্পে সরাসরি প্রভাব ফেলে, কারণ ভারতে ৮১ শতাংশ ভারী যানবাহন ডিজেলে চলে। দাম বৃদ্ধি হলে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এই চাপ কমাতে সুদের হার বাড়াতে পারে, যা ঋণের খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এবং ভারতের আমদানি নির্ভরতা (প্রায় ৮৫ শতাংশ) বিবেচনা করে আগামী দিনে দামে সামান্য ওঠানামা হতে পারে। তবে, সরকার যদি আবগারি শুল্ক কমায় বা রাজ্যগুলো ভ্যাটে ছাড় দেয়, তবে ভোক্তারা স্বস্তি পেতে পারেন। আগামী বাজেটে এই বিষয়ে সিদ্ধান্তের দিকে সবার নজর রয়েছে। ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম আজও সাধারণ মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কারণে দামে স্থিতিশীলতা থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে স্বস্তির জন্য নীতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন। জনগণ আশা করছে, সরকার জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।