ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে (Pawan Khera) সামরিক সংঘাত নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত দাবি রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ঘটনায় মধ্যস্থতা করেছেন এবং এই সংঘাত বন্ধ করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এই দাবির প্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা পবন খেরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী কে? আমি২ গুগল করেছি, সেখানে নরেন্দ্র মোদীর নাম দেখাচ্ছে, কিন্তু ট্রাম্প কেন সবকিছু বলছেন? তিনি কেন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?” খেরার এই মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সামরিক সংঘাতের পর ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে তিনি এই সংঘাত বন্ধ করতে মধ্যস্থতা করেছেন এবং বাণিজ্য চুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে দুই দেশকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছেন।
তবে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন যে এই যুদ্ধবিরতি ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে পাকিস্তানের অনুরোধে সম্পন্ন হয়েছে। এতে মার্কিন মধ্যস্থতার কোনও ভূমিকা ছিল না। মিশ্রী আরও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে এই সময়ে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি বা মধ্যস্থতার বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।”
ট্রাম্পের দাবি এবং মোদীর নীরবতা নিয়ে কংগ্রেস দল তীব্র সমালোচনা করেছে। পবন খেরা বলেছেন, “ট্রাম্প এই দাবি ১৮ বার করেছেন, কিন্তু মোদী একবারও এর প্রতিবাদ করেননি। এই নীরবতার অর্থ কী? ভারতের জাতীয় স্বার্থ কি বিপন্ন হচ্ছে?”
তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন যে ট্রাম্প কেন ভারত ও পাকিস্তানকে একই সমতলে তুলনা করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে তুলনা করছেন। খেরার মতে, এটি ভারতের জন্য অপমানজনক এবং মোদীর নীরবতা এই অপমানকে আরও গভীর করছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও এই বিষয়ে বলেছেন, “ট্রাম্পের দাবি জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়। মোদীর উচিত এই দাবি প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করা।” তিনি আরও দাবি করেছেন যে ট্রাম্পের বারবার দাবি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করছে এবং এটি ভারতের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার জানিয়েছে যে জম্মু ও কাশ্মীর সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাই একমাত্র সমাধান। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বাণিজ্যের কোনও প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়নি।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে পাকিস্তানের অধিকৃত ভারতীয় ভূখণ্ড খালি করাই এই সংঘাতের মূল সমস্যা।
ট্রাম্পের এই দাবি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিজেপি সমর্থকদের একাংশ মোদীর নীরবতাকে সমর্থন করলেও, বিরোধী দলগুলি এটিকে দুর্বল নেতৃত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নেতৃত্বের সঙ্গে মোদীর এই ঘটনার তুলনা করেছেন। কংগ্রেস দাবি করেছে, “ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকার হুমকির কাছে মাথা নত করেননি, কিন্তু মোদী ট্রাম্পের প্রশংসার জন্য ভারতের স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছেন।”
রুতুরাজের ইয়র্কশায়ার কাউন্টি সফর বাতিল, কেন পিছু হটলেন সিএসকে অধিনায়ক
এই বিতর্ক ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই দাবি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মোদীর নীরবতা এবং কংগ্রেসের সমালোচনা ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।