বিহারে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে পাটনা সিভিল কোর্ট।(Patna Court) শুক্রবার আদালতের অফিসিয়াল মেল আইডিতে একটি হুমকির চিঠি আসে। সেখানে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, খুব শিগগিরই আদালত প্রাঙ্গণকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হবে। ইমেল পাওয়া মাত্রই আদালত মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বিচারক, আইনজীবী, কর্মচারী এবং মামলাকারীদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোটা কোর্ট চত্বর কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়।
আতঙ্কের আবহ
সূত্রের খবর, হঠাৎ এমন একটি ইমেল পাওয়ার পরে আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে খবর দেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাহিনী কোর্টে এসে পৌঁছায়। আদালতের প্রতিটি কক্ষ, করিডর, রেকর্ড রুম এবং গাড়ি পার্কিং এলাকা খুঁটিয়ে তল্লাশি করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও বিস্ফোরক বা সন্দেহজনক জিনিসপত্র উদ্ধার হয়নি। যদিও হুমকি ইমেলটি মিথ্যা কি না, তা নিশ্চিত করতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
বিচারক ও আইনজীবীরা নিরাপদ স্থানে
হুমকির খবর পাওয়া মাত্রই আদালতের (Patna Court) সমস্ত বিচারককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আইনজীবী মহলেও আতঙ্ক দেখা দেয়। সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আদালতে হাজির থাকেন— আইনজীবী, ক্লায়েন্ট, মামলার সাক্ষী বা অন্য নানান কারণে আগত মানুষজন। এদিন হঠাৎ এই ঘটনার জেরে সকলকেই দ্রুত আদালত চত্বর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আদালতের কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় দিনের বাকি সময়ের জন্য।
পুলিশের তৎপরতা
পাটনা পুলিশ কমিশনার স্বয়ং ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশির দায়িত্ব নেন। বোম স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড এবং ফরেন্সিক টিমকে কাজে নামানো হয়েছে। আদালতের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, পাশাপাশি ইমেলটি কোথা থেকে পাঠানো হয়েছে তা ট্রেস করার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই মেল পাঠানো হয়েছে। তবে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অতীতে নজির
উল্লেখযোগ্যভাবে, বিহার অতীতে একাধিকবার জঙ্গি সংগঠনের নিশানায় এসেছে। পাটনায় পূর্বে আইএম (ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন) এর কার্যকলাপ ধরা পড়েছিল। ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদির হুঙ্কার র্যালিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে এই শহরেই। সেই ঘটনার স্মৃতি আজও অনেকের মনে তাজা। তাই আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বোমা হামলার হুমকি আসায় প্রশাসনের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
প্রশাসনের ভূমিকা
রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার রিপোর্ট তোলা হয়েছে। হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে পাটনা জুড়ে। আদালতের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। গাড়ি প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে, প্রতিটি প্রবেশদ্বারে চেকিং চলছে। শুধু আদালত নয়, শহরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতর ও রেলস্টেশনেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ
আদালত (Patna Court) প্রাঙ্গণে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। হঠাৎ করে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়, চারদিক পুলিশে ভরে যায়— এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেকেই জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে যেভাবে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নিয়ে আলোচনা চলছে, তার মধ্যে এ ধরনের ঘটনা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলছে।