জয় হিন্দ কলোনি ভাঙতে স্থগিতাদেশ, দিল্লিতে তৃণমূলের বড় সাফল্য!

দিল্লির জয়হিন্দ কলোনিতে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বড়সড় জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস। পাতিয়ালা হাউস কোর্ট ওই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার উপর বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ জারি করেছে। দিল্লি প্রশাসনের…

TMC Rally_Sealdah

দিল্লির জয়হিন্দ কলোনিতে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বড়সড় জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস। পাতিয়ালা হাউস কোর্ট ওই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার উপর বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ জারি করেছে। দিল্লি প্রশাসনের এই উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তপ্ত ছিল রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতি। সেই প্রেক্ষিতেই আদালতের এই রায়কে নিজেদের আন্দোলনের এক বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।

তৃণমূল বৃহস্পতিবার নিজেদের এক্স (প্রাক্তন টুইটার) হ্যান্ডলে এই রায় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে লেখে, “দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট জয়হিন্দ কলোনিতে বাঙালি পরিবারগুলির উচ্ছেদে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই রায় আমাদের আন্দোলনের পথে এক বড় জয়। তৃণমূল কংগ্রেস বাংলাভাষীদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেমন ছিল, তেমনই থাকবে।”

   

দীর্ঘদিন ধরেই জয়হিন্দ কলোনিতে বসবাস করছেন শতাধিক বাংলাভাষী পরিবার। বহু দশক ধরে এই অঞ্চলে তাঁদের বসবাস হলেও সম্প্রতি দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (DDA)-র তরফে উচ্ছেদের নোটিস পাঠানো হয়। অভিযোগ, এই অঞ্চলের জমি ‘অবৈধ দখল’ বলে চিহ্নিত করে বুলডোজার চালানোর তোড়জোড় শুরু করেছিল প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং তৃণমূলের প্রতিনিধিরাও সেই মামলায় পাশে দাঁড়ান।

উল্লেখযোগ্যভাবে, গত কিছুদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস এ বিষয়ে সরব হয়ে উঠেছিল। সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলীয় প্রতিনিধি দল জয়হিন্দ কলোনি পরিদর্শন করে। সেই সময় অভিষেক বলেন, “বাংলাভাষীদের উপর এ এক প্রকার আক্রমণ। শুধু বাঙালি বলেই কি এই উচ্ছেদ? কেন এত বছর পর তাঁদের বসতিকে অবৈধ বলা হচ্ছে? আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব এবং শেষ পর্যন্ত লড়ব।”

তৃণমূলের তরফে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “ভারতের যেকোনো প্রান্তে বাংলাভাষী মানুষদের বিরুদ্ধে অন্যায় হলে তৃণমূল চুপ করে বসে থাকবে না। জয়হিন্দ কলোনির বাসিন্দাদের এই লড়াইয়ে আমরা পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।”

আদালতের এই স্থগিতাদেশ কেবল একটি আইনি জয় নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে তৃণমূল নিজেদের জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর পক্ষে আওয়াজ তোলার একটি বড় বার্তা দিতেও চায় বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

Advertisements

তৃণমূল সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, দিল্লির জয়হিন্দ কলোনির উচ্ছেদ রুখে দেওয়ার পর তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভিনরাজ্যে বসবাসকারী সমস্ত বাংলাভাষীদের অধিকার রক্ষায় আরও সক্রিয় হতে চলেছেন। বিশেষত অসম, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সমস্যার উপর নজরদারি বাড়াবে তৃণমূল।

তৃণমূল নেতা সৌগত রায় বলেন, “এই জয় নিছক আইনি নয়, এটা মানুষের জয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে একাধিকবার বাংলাভাষীদের উপরে প্রশাসনিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। আমরা চুপ করে থাকতে পারি না।”

এই মুহূর্তে আদালতের রায়ের ফলে আপাতত জয়হিন্দ কলোনির বাসিন্দারা স্বস্তিতে। তবে তাঁদের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। তৃণমূল জানিয়েছে, যত দিন না স্থায়ীভাবে তাঁদের বসবাস সুনিশ্চিত হয়, তত দিন এই আন্দোলন চলবে।

অতএব, আদালতের এই রায় শুধু এক এলাকার নয়, বরং এক বৃহত্তর ভাষা-সমাজের আত্মসম্মান রক্ষার লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এবং সেই লড়াইয়ে তৃণমূলের অবস্থান যে দৃঢ়, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো আদালতের এই নির্দেশের মাধ্যমে।