‘দিতেই হবে কোটি টাকার জরিমানা’, পতঞ্জলিকে সাফ জানাল হাই কোর্ট

এলাহাবাদ হাইকোর্ট সম্প্রতি পতঞ্জলি (patanjali) আয়ুর্বেদ লিমিটেডের একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে, যেখানে কোম্পানিটি ২৭৩.৫০ কোটি টাকার গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) জরিমানার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ…

patanjali must pay fine

এলাহাবাদ হাইকোর্ট সম্প্রতি পতঞ্জলি (patanjali) আয়ুর্বেদ লিমিটেডের একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে, যেখানে কোম্পানিটি ২৭৩.৫০ কোটি টাকার গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) জরিমানার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। বিচারপতি শেখর বি সরাফ এবং বিচারপতি বিপিন চন্দ্র দীক্ষিতের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ পতঞ্জলির (patanjali)যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।

তারা দাবি করেছিল যে এই ধরনের জরিমানা ফৌজদারি দায়বদ্ধতার সমতুল্য এবং এটি কেবল ফৌজদারি আদালতের বিচারের মাধ্যমেই আরোপ করা যেতে পারে। আদালতের রায়ে স্পষ্ট করা হয়েছে যে জিএসটি আইনের ১২২ নম্বর ধারার অধীনে কর কর্তৃপক্ষ ফৌজদারি আদালতের বিচার ছাড়াই দেওয়ানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জরিমানা আরোপ করতে পারে।

   

মামলার পটভূমি (patanjali)

পতঞ্জলি (patanjali) আয়ুর্বেদ লিমিটেড, যিনি যোগগুরু বাবা রামদেবের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি স্বনামধন্য ভারতীয় আয়ুর্বেদিক পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থা, জিএসটি আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে কর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২৭৩.৫০ কোটি টাকার জরিমানার নোটিশ পেয়েছিল। কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা কর ফাঁকি, ভুল হিসাব প্রদান এবং জিএসটি নিয়মের অন্যান্য লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত।

এই জরিমানার বিরুদ্ধে পতঞ্জলি আল্লাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করে, যুক্তি দিয়ে বলে যে এই ধরনের জরিমানা ফৌজদারি দায়বদ্ধতার সমতুল্য এবং এটি আরোপ করতে হলে ফৌজদারি আদালতে বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন। তবে, আদালত এই যুক্তি গ্রহণ করেনি।

আদালতের রায়

বিচারপতি শেখর বি সরাফ এবং বিচারপতি বিপিন চন্দ্র দীক্ষিতের বেঞ্চ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে জিএসটি আইনের ১২২ নম্বর ধারা কর কর্তৃপক্ষকে দেওয়ানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেয়। আদালতের মতে, এই ধরনের জরিমানা ফৌজদারি দায়বদ্ধতার পরিবর্তে প্রশাসনিক এবং নিয়ন্ত্রক প্রকৃতির।

আদালত আরও উল্লেখ করেছে যে জিএসটি আইনের বিধানগুলি স্পষ্টভাবে কর লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি নির্ধারণ করে, এবং এই পদ্ধতি ফৌজদারি বিচারের প্রয়োজনীয়তা থেকে পৃথক। আদালত পতঞ্জলির (patanjali) আইনজীবীদের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে কর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আরোপিত জরিমানা আইনের সঙ্গে

সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এটি বৈধভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। আদালতের এই রায় পতঞ্জলির (patanjali) জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি কোম্পানিকে এই বিপুল পরিমাণ জরিমানা পরিশোধ করতে বাধ্য করবে।

পতঞ্জলির প্রতিক্রিয়া

এই রায়ের পর পতঞ্জলি (patanjali) আয়ুর্বেদ লিমিটেডের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। তবে, আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, কোম্পানি এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারে। পতঞ্জলির আইনজীবীরা এই বিষয়ে আরও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

Advertisements

জিএসটি আইনের গুরুত্ব

জিএসটি আইন ২০১৭ সালে ভারতে চালু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল কর ব্যবস্থাকে সরলীকরণ করা এবং কর ফাঁকি রোধ করা। এই আইনের অধীনে, ব্যবসায়ী সংস্থাগুলিকে নিয়মিত কর রিটার্ন দাখিল করতে হয় এবং কর সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলতে হয়।

জিএসটি আইনের ১২২ নম্বর ধারা কর কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন ধরনের লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে ভুল হিসাব প্রদান, কর ফাঁকি, এবং অন্যান্য নিয়ম লঙ্ঘন। পতঞ্জলির ক্ষেত্রে, কর কর্তৃপক্ষ এই ধারার অধীনে জরিমানা আরোপ করেছে, যা আদালত বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

জগন্নাথ মন্দিরের গোপন ভিডিও ঘিরে তোলপাড়,নিরাপত্তা ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ, চাপে প্রশাসন

প্রভাব ও ভবিষ্যৎ

এই রায়ের ফলে পতঞ্জলি (patanjali) আয়ুর্বেদ লিমিটেডের আর্থিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে। ২৭৩.৫০ কোটি টাকার জরিমানা একটি বিশাল অঙ্ক, এবং এটি পরিশোধ করা কোম্পানির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এছাড়াও, এই রায় অন্যান্য ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে কাজ করতে পারে, যারা জিএসটি নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে জরিমানার সম্মুখীন হতে পারে।

এই ঘটনা পতঞ্জলির (patanjali) ব্র্যান্ড ইমেজের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ কোম্পানিটি ভারতীয় বাজারে আয়ুর্বেদিক এবং প্রাকৃতিক পণ্যের একটি শীর্ষস্থানীয় নাম হিসেবে পরিচিত। জিএসটি লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং এই জরিমানা কোম্পানির সুনামের উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলতে পারে।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায় জিএসটি আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং কর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার উপর জোর দেয়। পতঞ্জলি (patanjali) আয়ুর্বেদ লিমিটেডের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি পরাজয়, এবং এটি কোম্পানির ভবিষ্যৎ কৌশল এবং আর্থিক পরিকল্পনার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এই রায়ের মাধ্যমে আদালত স্পষ্ট করেছে যে জিএসটি আইনের অধীনে জরিমানা আরোপের জন্য ফৌজদারি বিচারের প্রয়োজন নেই, যা ভারতের কর ব্যবস্থার প্রশাসনিক কাঠামোর শক্তিশালী প্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়।