বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে খাবারে পোকা! নড়েচড়ে বসল রেল কর্তৃপক্ষ

গত ২২ জুলাই এক বিপজ্জনক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে নয়াদিল্লি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে। যাত্রী হার্দিক পাঞ্চাল একটি চমকে দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তাঁর…

titagarh makes new vande bharat production

গত ২২ জুলাই এক বিপজ্জনক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে নয়াদিল্লি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে। যাত্রী হার্দিক পাঞ্চাল একটি চমকে দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তাঁর এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে। তিনি লিখেছেন, “২২ জুলাই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে করে দিল্লি থেকে আমি যাত্রা শুরু করি। কিছুক্ষণ পর ট্রেনের স্টাফ আমাদের খাবার পরিবেশন করে। কিন্তু আমি যখন খাবারের প্যাকেটটি খুলে দেখি, তখনই হতভম্ব হয়ে যাই। খাবারের মধ্যে একাধিক জীবন্ত পোকা দেখতে পাই।”

হার্দিক পাঞ্চালের পোস্টের সঙ্গে ছিল খাবারের সেই ভয়ঙ্কর ছবি। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, খাবারের মধ্যে ছোট ছোট পোকা ভেসে রয়েছে। যেহেতু বন্দে ভারত এক্সপ্রেস দেশের অন্যতম আধুনিক ও প্রিমিয়াম ট্রেন হিসেবে পরিচিত, সেখানে এমন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়ে যায় প্রবল সমালোচনা। বহু নেটিজেন এই ছবি রিটুইট করে রেল দফতরের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। প্রশ্ন ওঠে— এই ধরনের প্রিমিয়াম ট্রেনে যদি এমন হয়, তবে সাধারণ ট্রেনগুলির কী অবস্থা?

   

ছবিগুলি ভাইরাল হতেই রেলমন্ত্রকের তরফে নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় ‘রেলওয়ে সেবা’ হ্যান্ডেল থেকে। রেলের তরফে জানানো হয়, “আমরা এই ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দয়া করে আপনাদের যোগাযোগের বিস্তারিত এবং পিএনআর নম্বর আমাদের জানান, যাতে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারি।”

এদিকে ঘটনার পর হার্দিক জানান, তিনি খাবার ফেরত দিয়ে অন্য কিছু খাননি। তিনি আরও দাবি করেন, এই ঘটনা শুধু একজনের সঙ্গে নয়, পাশের আরও একজন যাত্রীর খাবারেও এমন পোকা ছিল। বিষয়টি ট্রেনের কেটারিং কর্মীদের জানানো হলেও, তাঁরা নাকি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখেননি।

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে— কীভাবে এই ধরনের মানহীন খাবার একটি হাই-স্পিড প্রিমিয়াম ট্রেনে পরিবেশন করা হয়? রেলের চুক্তিভিত্তিক ক্যাটারিং সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় খাবারের মান খারাপ, আবার কখনও বা দাম অত্যাধিক। কিন্তু জীবন্ত পোকা থাকা খাবার পরিবেশন অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের দূষিত খাবার খেলে যাত্রীরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

Advertisements

এই ঘটনায় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছেও নেটিজেনদের তরফে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ লিখেছেন, “নতুন ট্রেন চালানো হচ্ছে, কিন্তু যাত্রীদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা কোথায়?” আবার কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, “এই ঘটনার পর কি ওই ক্যাটারিং সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে?”

এই ঘটনার পরে রেল কতটা সক্রিয়ভাবে তদন্ত করে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। কারণ একাধিকবার এমন খাবার বিতর্ক সামনে এসেছে, কিন্তু তার কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। বন্দে ভারতের মতো একটি আধুনিক ট্রেনে এমন ঘটনা কেবল রেলের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে না, বরং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও বড়সড় সংশয় তৈরি করে।

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দিল, শুধু প্রযুক্তি বা ট্রেনের গতি নয়, যাত্রী পরিষেবার মান, স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপত্তাই আসল। তা না হলে যাত্রা আর আরামদায়ক থাকছে না, বরং বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।