বালোচ দের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার দাবি পশতুনদের

খাইবার পাখতুনখোয়া (pashtuns), পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের একটি, যা পূর্বে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (NWFP) নামে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলটি তার সমৃদ্ধ পশতুন সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং…

pushtuns wants to separate from pakistan

খাইবার পাখতুনখোয়া (pashtuns), পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের একটি, যা পূর্বে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (NWFP) নামে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলটি তার সমৃদ্ধ পশতুন সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তের কারণে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিক সময়ে, খাইবার পাখতুনখোয়া পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার দাবি তুলেছে , যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। এই দাবির পেছনে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, এবং রাজনৈতিক কারণ রয়েছে

   

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট (pashtuns)

খাইবার পাখতুনখোয়ার পশতুন (pashtuns) জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বতন্ত্র জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় সবসময়ই প্রবল ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলটি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৯৩ সালে ডুরান্ড রেখার মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়, যা পশতুন জনগোষ্ঠীকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। এই বিভাজন পশতুনদের মধ্যে একটি স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দাবিকে উসকে দেয়।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময়, খাইবার পাখতুনখোয়ার ভাগ্য নির্ধারণের জন্য একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই গণভোটে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়েছিল, ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেওয়া। পশতুন (pashtuns) নেতা বাচা খান এবং তার খুদাই খিদমতগার আন্দোলন একটি স্বাধীন ‘পাখতুনিস্তান’ গঠনের দাবি করেছিলেন, কিন্তু এই বিকল্প গণভোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলস্বরূপ, গণভোটে পাকিস্তানের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়, যদিও বাচা খান এই ফলাফলকে অযৌক্তিক বলে মনে করেছিলেন। তিনি কংগ্রেস নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, “আপনারা আমাদের নেকড়ের মুখে ছুঁড়ে মারলেন!”

বর্তমান দাবির পটভূমি

সাম্প্রতিক সময়ে, খাইবার পাখতুনখোয়ায় পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। পশতুন (pashtuns) তহফুজ মুভমেন্ট (PTM)-এর মতো সংগঠনগুলো পশতুনদের (pashtuns) বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচার, জোরপূর্বক গুম, এবং অঞ্চলটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবহেলার অভিযোগ তুলেছে। এই ক্ষোভ পশতুন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবনাকে উসকে দিয়েছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পিটিএম নেতা নূর বাচা চমন প্রতিবাদে বলেন, “পশতুনরা (pashtuns) গত ৭৬ বছর ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে ক্লান্ত। আমরা ডুরান্ড রেখায় পাসপোর্ট মানি না। পশতুনরা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে।” এই বক্তব্য পশতুনদের মধ্যে পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার সমর্থন বাড়ছে বলে ইঙ্গিত দেয়।

২০২৫ সালের মে মাসে, খাইবার পাখতুনখোয়ার একজন ইসলামিক উপদেষ্টা দাবি করেন, “যদি ভারত পাকিস্তানের উপর আক্রমণ করে, আমরা পশতুনরা (pashtuns) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়াব। পাকিস্তান আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে।” এই ধরনের বক্তব্য ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে পশতুনদের অসন্তোষকে আরও স্পষ্ট করে।

চলমান বিদ্রোহ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি

খাইবার পাখতুনখোয়ায় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি), লস্কর-ই-ইসলাম, এবং আল-কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে চলতে থাকা বিদ্রোহ অঞ্চলটির অস্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ, যা একসময় যুদ্ধের রূপ নিয়েছিল, ২০১৭ সালের পর নিম্ন-স্তরের বিদ্রোহে রূপান্তরিত হয়েছে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ডেরা ইসমাইল খান এবং কারাক জেলায় টিটিপি’র ১৩ জন জঙ্গিকে হত্যা করে। এছাড়া, মার্চ ২০২৫-এ দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে মসজিদে বিস্ফোরণে ধর্মীয় নেতা সহ বেশ কয়েকজন আহত হন, যা অঞ্চলটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা প্রকাশ করে।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জেরে বাতিল IPL? বিসিসিআইয়ের অফিসিয়াল বিবৃতি জানুন

আলাদা হওয়ার দাবির কারণ

সাংস্কৃতিক ও জাতিগত পরিচয়: পশতুন জনগোষ্ঠী তাদের স্বতন্ত্র ভাষা (পশতু) এবং সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির মতো পশতুন (pashtuns) জাতীয়তাবাদী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের নাম ‘পাখতুনখোয়া’ করার দাবি করে এসেছে, যা ২০১০ সালে বাস্তবায়িত হয়। তবে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে পশতুন পরিচয়ের অবহেলা এই দাবিকে উসকে দিয়েছে।

অর্থনৈতিক অবহেলা: খাইবার পাখতুনখোয়া অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। পাকিস্তান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রায়শই পাঞ্জাব বা সিন্ধের দিকে কেন্দ্রীভূত হয়, যা পশতুনদের মধ্যে বঞ্চনার অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।

সেনাবাহিনীর অত্যাচার: পিটিএম-এর মতো আন্দোলন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, এবং নিরাপত্তা অভিযানের নামে বেসামরিক নাগরিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছে।

ডুরান্ড রেখার বিতর্ক: পশতুনরা ডুরান্ড রেখাকে একটি কৃত্রিম বিভাজন হিসেবে দেখে, যা তাদের আফগানিস্তানের পশতুন ভাইদের থেকে আলাদা করেছে। এই রেখার বৈধতা নিয়ে বিতর্ক পশতুন ঐক্যের দাবিকে শক্তিশালী করেছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, বিশেষ করে ২০২৫ সালের অপারেশন সিঁদুরের পর, খাইবার পাখতুনখোয়ার পশতুনদের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভকে আরও তীব্র করেছে। পাকিস্তানের ড্রোন হামলা এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের নির্ভুল হামলা পশতুনদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি করেছে যে পাকিস্তান সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে কিছু পশতুন নেতা ভারতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন, যা পাকিস্তানের জন্য কৌশলগতভাবে উদ্বেগজনক।

খাইবার পাখতুনখোয়ার পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার দাবি ঐতিহাসিক ক্ষোভ, সাংস্কৃতিক পরিচয়, এবং বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির সমন্বয়। যদিও এই দাবি এখনও একটি ব্যাপক আন্দোলনের রূপ নেয়নি, পিটিএম-এর মতো সংগঠন এবং স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য এই অঞ্চলের অসন্তোষের গভীরতা প্রকাশ করে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা এই দাবিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Advertisements