নয়াদিল্লি: সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রাকৃতিক ও জলবায়ু সহনশীল কৃষির প্রসারে এখনও বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কৃষকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা, কর্মীসংকট এবং বাস্তবায়নের ঘাটতি—এমনটাই দাবি করেছে সংসদের Estimates Committee। বুধবার লোকসভায় (Parliament Panel) পেশ হওয়া এই রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, প্রাকৃতিক কৃষি (Natural Farming) নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা যথেষ্ট হলেও আর্থিক সুরক্ষা না থাকায় এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কমিটি জানিয়েছে, তিন বছরে প্রতি হেক্টরে ₹৩১,৫০০ থেকে ₹৪৬,৫০০ আর্থিক সহায়তা সরকারের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, রাসায়নিক থেকে জৈব কৃষিতে রূপান্তরের যে উৎপাদনহানি ও অর্থনৈতিক চাপ থাকে, তা পূরণ করতে এই পরিমাণ সহায়তা যথেষ্ট নয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “এই অর্থনৈতিক সহায়তা একদিকে যেমন স্বাগতযোগ্য, তেমনই অন্যদিকে এটি প্রাথমিক ৩-৪ বছরে কৃষকের উপর আসা অতিরিক্ত চাপ ও উৎপাদন কমে যাওয়ার ক্ষতিপূরণে অপ্রতুল।”
সিকিমের মতো সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত কৃষি মডেল গড়ে তুলতে গেলে প্রয়োজন জৈব সার ও উপকরণের সহজলভ্যতা, যা এই মুহূর্তে দেশে অনেক জায়গায় অনুপস্থিত বলে কমিটি মন্তব্য করেছে।
কমিটি জানিয়েছে, সরকার ১১.৩৭ লক্ষ কৃষক ও অংশীদারকে নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, National Programme for Organic Production (NPOP) এবং Participatory Guarantee System (PGSIndia)-র মতো সার্টিফিকেশন প্রকল্পগুলির সুবিধা এখনও কৃষকদের একটা বড় অংশের কাছে অজানা রয়ে গিয়েছে। ফলে, কৃষিপণ্যকে জৈব হিসেবে বাজারজাত করতে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
কমিটি আরও জানিয়েছে, Indian Council of Agricultural Research (ICAR) পরিচালিত NICRA (National Innovations in Climate Resilient Agriculture) প্রকল্পে বাজেট সঙ্কোচ দেখা দিয়েছে। ৩১০টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মধ্যে মাত্র ১৫১ জেলায় এই প্রকল্পের প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে। ফলে, বহু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল এখনও প্রাকৃতিক চাষ ও জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তির বাইরে রয়ে গিয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, আধুনিক বীজের গ্রহণযোগ্যতা কম, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থা এবং বৃহৎ পরিসরে মূল্যায়নের ঘাটতি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, “যেখানে কৃষিজীবনের অস্তিত্বই ঝুঁকির মুখে, সেখানে এইরকম আর্থিক প্রতিবন্ধকতা গভীর চিন্তার বিষয়।”
Krishi Vigyan Kendra (KVK)-র মাধ্যমে প্রাকৃতিক কৃষি প্রসারের চেষ্টা হলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৩,৫০০ শূন্যপদের কারণে কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি, ICAR ও non-ICAR KVK কর্মীদের মধ্যে কর্মপরিস্থিতির বৈষম্যও একটি বড় সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, National Mission on Natural Farming (NMNF) ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গবাদিপশু ও উদ্ভিদ উপাদান ব্যবহার করে রাসায়নিকবিহীন কৃষি পদ্ধতির প্রসার ঘটানো হচ্ছে। সম্প্রতি সংসদে কৃষিমন্ত্রী রামনাথ ঠাকুর জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষেরও বেশি কৃষক এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন।