সংসদে তুমুল প্রতিবাদের জেরে মুলতুবি অধিবেশন

মঙ্গলবার, সংসদের বাদল (Parliament) অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পরিচালিত বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিরোধী দলের তীব্র…

Parliament session adjourned

মঙ্গলবার, সংসদের বাদল (Parliament) অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পরিচালিত বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিরোধী দলের তীব্র প্রতিবাদের কারণে লোকসভা ও রাজ্যসভায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই বিতর্কের জেরে উভয় কক্ষই ২৩ জুলাই পর্যন্ত মুলতুবি ঘোষণা করা হয়েছে।

লোকসভা ও রাজ্যসভা আগামী বুধবার সকাল ১১টায় পুনরায় বসবে।দিনের শুরুতে, লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিরোধীদের প্রতিবাদের কারণে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। পুনরায় অধিবেশন শুরু হওয়ার পরও বিরোধীদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় লোকসভা দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়।

   

বিরোধীদের এই উত্তেজনার জন্য কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তীব্র সমালোচনা করে বলেন, সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু বিরোধী দল “জনগণের অর্থ অপচয়” করছে। তিনি বলেন, “বিরোধীরা আলোচনার দাবি করছে, এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত। তাহলে তারা কেন সংসদ চলতে দিচ্ছে না? এই দ্বৈত মানদণ্ড ভুল।

আলোচনা চাইলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। সরকার বলেছে, আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আপনারা জনগণের অর্থ নষ্ট করছেন।”লোকসভায় অধিবেশনের সভাপতিত্বকারী ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ জগদম্বিকা পাল বিরোধীদের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের বিরোধিতা করে বলেন, “প্ল্যাকার্ড দেখানোর পরিবর্তে আপনারা প্রস্তাব বা রেজোলিউশন জমা দিতে পারেন।

ব্যবসায়িক উপদেষ্টা কমিটি তা বিবেচনা করবে। স্পিকার সময় দেবেন, এবং সরকার জবাব দেবে। আপনারা কেন চিন্তিত?” তিনি বিরোধীদের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের পরিবর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বান জানান।একইভাবে, রাজ্যসভায়ও বিরোধী সাংসদরা বিহারের নির্বাচনী তালিকা সংশোধন নিয়ে আলোচনার দাবিতে স্লোগান দেন।

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব-সহ একাধিক নেতা সংসদের মকর দ্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং এই প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। প্রতিবাদকারী নেতারা পোস্টার প্রদর্শন করেন, যেখানে এই সংশোধন প্রক্রিয়াকে “ভারতীয় অধিকারের চুরি”, “গণতন্ত্রের মৃত্যু” বলে অভিহিত করা হয়।

বিহারের এসআইআর ইস্যুটি ইন্ডিয়া ব্লকের সাংসদদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তারা সংসদে এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন যে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত। এছাড়াও, বিরোধী দল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অপারেশন সিঁদুর নিয়েও আলোচনার দাবি জানিয়েছে।

Advertisements

স্ত্রী ও প্রেমিকের হাতে নির্মম খুন স্বামী, ১৫ দিন পর উদ্ধার দেহ

বিরোধীদের অভিযোগ

ইন্ডিয়া ব্লকের নেতারা অভিযোগ করেছেন যে বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা সংবিধান প্রদত্ত ভোটাধিকারের লঙ্ঘন। তারা এই প্রক্রিয়াকে গণতন্ত্রের উপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। বিরোধী নেতারা দাবি করেছেন যে এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয় এবং এর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

সরকারের পক্ষ থেকে কিরেন রিজিজু স্পষ্ট করেছেন যে সরকার যেকোনো বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তিনি বিরোধীদের সংসদের কার্যক্রম ব্যাহত না করে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ এবং স্লোগানের কারণে উভয় কক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যার ফলে অধিবেশন মুলতুবি করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডিয়া ব্লক এবং এনডিএ-র মধ্যে এই রাজ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী তালিকা সংশোধন নিয়ে বিতর্ক নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুকে জনগণের সামনে তুলে ধরে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান বিতর্ক ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদ এবং সংসদে আলোচনার দাবি নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনাকে তীব্র করেছে। এই ইস্যু আগামী দিনে কীভাবে সমাধান হয় এবং এর নির্বাচনের উপর কী প্রভাব পড়ে, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।