বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি পাপ্পু যাদবের

নাগপুরে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার পর লোকসভার সাংসদ পাপ্পু যাদব বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন। তিনি এই সংগঠনগুলোর সদস্যদের…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/pappu.jpg

নাগপুরে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার পর লোকসভার সাংসদ পাপ্পু যাদব বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন। তিনি এই সংগঠনগুলোর সদস্যদের “গুন্ডা” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এরা সরকারের সুরক্ষা পেয়ে দেশের সামাজিক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। হিংসার প্রসঙ্গে পপ্পু যাদব বলেন, “বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের লোকেরা গুন্ডা এবং দাঙ্গাবাজ। এদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। এরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পায়। আমি মনে করি, এখন দেশের অর্থনীতি ও অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনই ভাবা দরকার।” যাদব জেডি(ইউ) নেতা সঞ্জীব কুমারের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কাছে ‘যোগী মডেল’ বাস্তবায়নের দাবির জবাবেও মন্তব্য করেছেন। ‘যোগী মডেল’ বলতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কঠোর আইনশৃঙ্খলা নীতির কথা বোঝানো হয়েছে। যাদব বলেন, “কোনো ‘যোগী মডেল’ বলে কিছু নেই। একজন অপরাধী অপরাধীই, তাকে জাত বা ধর্ম দিয়ে বিভক্ত করা যায় না। মানুষ সবসময় বিহারকে অনুসরণ করেছে, অন্য কাউকে নয়।”

এদিকে, নাগপুরে গত ১৭ মার্চ সংঘটিত হিংসাত্মক সংঘর্ষের জেরে টানা দ্বিতীয় দিনের জন্য ১০টি থানা এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে। এই ঘটনায় গণেশপেঠ থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ২০২৩-এর একাধিক ধারাসহ অস্ত্র আইন, মহারাষ্ট্র পুলিশ আইন এবং জনসম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা প্রতিরোধ আইনের অধীনে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর জিতেন্দ্র বাবুরাও গড়গে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। এফআইআরে ৫১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন নাবালক রয়েছে। অভিযুক্তরা মূলত নাগপুর শহরের জাফর নগর, তাজবাগ, মোমিনপুরা এবং ভালাদপুরার বাসিন্দা।

   

এফআইআরে বলা হয়েছে, “প্রতিবাদের সময় ভিড় হঠাৎ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। তারা পুলিশের উপর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে এবং পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশের উপর কুড়ুল এবং লোহার রডের মতো মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও ভিড় ছত্রভঙ্গ না করে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে যায়, যা পুলিশ কর্মীদের এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।”
মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যোগেশ কদম নাগপুরের এই হিংসার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (ডিসিপি) স্তরের কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশকে প্রভাবিত এলাকার রাস্তা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারফিউ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২২৩ ধারায় শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাগপুরের এই হিংসার মূলে রয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের একটি প্রতিবাদ, যেখানে তারা মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবি জানিয়েছিল। প্রতিবাদের সময় ঔরঙ্গজেবের প্রতিমূর্তি পোড়ানো হয়, যা পরে গুজব ছড়ায় যে কোরআন পোড়ানো হয়েছে। এই গুজবের জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের উপর হামলায় ৩৪ জন আহত হয়েছেন এবং ৪৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। জেলা অভিভাবক মন্ত্রী চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পপ্পু যাদবের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, এই সংগঠনগুলো সরকারের সমর্থনে দেশের সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। বিজেপি নেতা প্রবীণ দাত্কে এই হিংসাকে “পূর্বপরিকল্পিত” বলে অভিযোগ করেছেন, পুলিশের ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনা মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।