‘গরিবের টাকা লুটেরা ক্ষমা পাবেনা’ বিস্ফোরক পঙ্কজ চৌধুরী

Plunderers of the Poor’s Money Won’t Be Forgiven,” Says Pankaj Chaudhary in Explosive Statement কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী (pankaj chaudhary) এবার মুখ খুললেন মেহুল…

pankaj choudhary on mehul choksi

Plunderers of the Poor’s Money Won’t Be Forgiven,” Says Pankaj Chaudhary in Explosive Statement
কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী (pankaj chaudhary) এবার মুখ খুললেন মেহুল চোকসি গ্রেফতার কাণ্ডে।পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) ঋণ জালিয়াতি মামলায় পলাতক হীরা ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্রীয় সরকার একটি বড় সাফল্য হিসেবে উদযাপন করছে।

কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী (pankaj chaudhary) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যারা গরিবের টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়েছে, তাদের সেই টাকা ফেরত দিতেই হবে। এই গ্রেপ্তারি ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শনিবার বেলজিয়ামের আন্তর্ভার্পে মেহুল চোকসিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর প্রত্যর্পণের অনুরোধের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চোকসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর ভাগ্নে নীরব মোদীর সঙ্গে মিলে পিএনবি থেকে প্রায় ১৩,৮৫০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি করেছেন। এই কেলেঙ্কারি ভারতের ব্যাঙ্কিং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলোর একটি।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন

কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী (pankaj chaudhary) সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, যারা গরিবের টাকা লুট করেছে, তাদের তা ফেরত দিতে হবে। দেশে অনেকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মেহুল চোকসির গ্রেপ্তারি একটি বড় অর্জন।” তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে মোদী সরকার আর্থিক অপরাধীদের কোনো ছাড় দেবে না এবং জনগণের টাকা ফেরত আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

চোকসির পলায়নের ইতিহাস

মেহুল চোকসি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারত থেকে পালিয়ে যান, যখন পিএনবি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার কয়েকদিন বাকি ছিল। তিনি প্রথমে অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন।

২০২১ সালে তিনি ডোমিনিকায় গ্রেপ্তার হন, যখন তিনি কথিতভাবে কিউবায় পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে, তাঁর আইনজীবীরা দাবি করেন, তাঁকে অ্যান্টিগুয়া থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। ডোমিনিকা তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণ না করে অ্যান্টিগুয়ায় ফেরত পাঠায়। এরপর ২০২৩ সালে চোকসি বেলজিয়ামে চলে যান, কথিতভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য।

ইডি এবং সিবিআই-এর তদন্তে প্রকাশ পায়, চোকসি তাঁর সংস্থা গীতাঞ্জলি জেমস এবং অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে পিএনবি-র কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে জালিয়াতি করে লেটার অব আন্ডারটেকিং (এলওইউ) এবং ফরেন লেটার অব ক্রেডিট (এফএলসি) প্রাপ্ত করেন। এই জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশী ব্যাঙ্কে স্থানান্তর করেন, যা মূলত মুক্তা আমদানির জন্য ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। তবে, এই অর্থ আমদানির কাজে ব্যবহার না করে তা লন্ডারিং করা হয়।

প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া

বেলজিয়ামে গ্রেপ্তারের পর চোকসির ভারতে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে, তাঁর আইনজীবী দল স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে প্রত্যর্পণের বিরোধিতা করতে পারে। চোকসির আইনজীবী ভিজয় আগরওয়াল এর আগে মুম্বইয়ের একটি আদালতে দাবি করেছিলেন, তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বেলজিয়ামে রয়েছেন এবং ভ্রমণে অক্ষম। এছাড়াও, তিনি ভারতের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন।

ইডি-র একটি সূত্র জানায়, চোকসিকে গ্রেপ্তার করতে ভারতীয় সংস্থাগুলো বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুই মাস ধরে সমন্বয় করছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের একটি আদালত থেকে জারি করা দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (২৩ মে, ২০১৮ এবং ১৫ জুন, ২০২১) উল্লেখ করে বেলজিয়াম পুলিশ তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে, চোকসি জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন, যা প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে।

কম সুদে সঠিক হোম লোন পেতে এই কৌশল জানুন

Advertisements

কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া (pankaj chaudhary)

মেহুল চোকসির গ্রেপ্তারির খবরে কেন্দ্রীয় সরকার উৎফুল্ল। পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, “এই গ্রেপ্তারি দেখায় যে ভারত সরকার আর্থিক জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর। আমরা নিশ্চিত করব, লুট করা টাকা ফেরত আসে এবং যারা প্রতারিত হয়েছে, তাদের ন্যায়বিচার দেওয়া হয়।” তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে সরকার এই ধরনের অপরাধীদের ধরতে বিশ্বজুড়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পিএনবি কেলেঙ্কারির আরেক প্রধান অভিযুক্ত নীরব মোদী বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন এবং তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের আইনি লড়াই চলছে। ২০১৯ সাল থেকে তিনি লন্ডনের একটি জেলে আটক রয়েছেন এবং বারবার জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। চোকসির গ্রেপ্তারির পর তদন্তকারী সংস্থাগুলো আশাবাদী যে, এই মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

জনমনে প্রভাব

পিএনবি কেলেঙ্কারি ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকে উন্মোচিত করেছিল এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। চোকসি এবং মোদীর মতো ব্যক্তিরা কীভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে দেশ ছাড়তে পেরেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। চোকসির গ্রেপ্তারি জনগণের মধ্যে আশা জাগিয়েছে যে, আর্থিক অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব।

হীরা ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করা মেহুল চোকসি এবং তাঁর সংস্থা গীতাঞ্জলি জেমস একসময় ভারতের গহনা শিল্পে প্রভাবশালী ছিল। তবে, এই কেলেঙ্কারির পর তাঁদের খ্যাতি মাটিতে মিশে যায়। ইডি এবং সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি চার্জশিট দাখিল করেছে, যেখানে অর্থ পাচার, জালিয়াতি এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে।

আগামীর পথ

চোকসির গ্রেপ্তারি ভারতের আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, তাঁর প্রত্যর্পণ এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে। বেলজিয়ামের আইনি ব্যবস্থা এবং চোকসির আইনি দলের কৌশল এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে। তবুও, কেন্দ্রীয় সরকার এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো আশাবাদী যে, এই মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং লুট করা অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে।

এই ঘটনা ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করেছে। মেহুল চোকসির গ্রেপ্তারি শুধু একটি আইনি জয় নয়, বরং গরিবের টাকা ফেরত আনার প্রতিশ্রুতির একটি প্রতীক।