ভারতীয় খাবারের অন্যতম প্রিয় উপাদান পনির। নিরামিষাহারীদের জন্য এটি প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং পার্টি থেকে রেস্তোরাঁ—সব জায়গায় এর চাহিদা অপরিসীম। কিন্তু সম্প্রতি পনিরের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (fssai) এবং অন্যান্য সংস্থার তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে বাজারে এবং এমনকি উচ্চমানের রেস্তোরাঁয়ও কৃত্রিম বা মিশ্রিত পনির ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে FSSAI নির্দেশ দিয়েছে যে রেস্তোরাঁগুলিকে এখন তাদের ব্যবহৃত পনিরের উৎস এবং গুণগত মান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এই নির্দেশ ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জারি করা হয়েছে।
পনিরের মিশ্রণ: একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা
সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে, ভারতে পনির সবচেয়ে বেশি মিশ্রিত খাদ্য পণ্যগুলির মধ্যে একটি। নয়ডা এবং গ্রেটার নয়ডায় ৭০২টি খাদ্য নমুনার পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৩% পনিরের নমুনা মানসম্মত নয়, এবং ৪০% নমুনা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
মিশ্রণের মধ্যে রয়েছে স্টার্চ, ভেজিটেবল অয়েল, ডিটারজেন্ট, এমনকি ফরমালিনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক। এই কৃত্রিম পনির, যাকে ‘অ্যানালগ পনির’ বলা হয়, দুধের পরিবর্তে অ-দুগ্ধজাত উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি দেখতে এবং স্বাদে খাঁটি পনিরের মতো হলেও পুষ্টিগুণে অনেকটাই কম এবংদীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কর্ণাটকের খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৬৩টি ব্র্যান্ডবিহীন পনিরের নমুনার মধ্যে মাত্র চারটি মানুষের খাওয়ার জন্য নিরাপদ ছিল। বেঙ্গালুরুতে ১৭টি নমুনার মধ্যে দুটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া (ই. কোলাই এবং সালমোনেলা) এবং অ-দুগ্ধজাত উপাদান দিয়ে তৈরি পাওয়া গেছে। এই তথ্যগুলি ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ হলে ভারতের ‘ব্রহ্মোস’ নাকি ‘স্ক্যাল্প’, কোনটি আক্রমণে বেশি শক্তিশালী হবে?
FSSAI-এর নির্দেশনা ও নতুন নিয়ম (fssai)
পনিরের মিশ্রণ নিয়ে ক্রমবর্ধমান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে FSSAI এবং রাজ্য খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগগুলি কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে (fssai)। মহারাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন মন্ত্রী নরহরি জিরওয়াল ঘোষণা করেছেন যে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড বিক্রেতা এবং ক্যাটারারদের ক্রয়ের বিল পরীক্ষা করা হবে এবং খাদ্য নমুনা সংগ্রহ করে অ্যানালগ পনির ব্যবহারের বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
লঙ্ঘনকারীদের খাদ্য নিরাপত্তা (fssai) ও মান আইন, ২০০৬ এবং ২০১১-এর নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এছাড়া, খাদ্য নিরাপত্তা ও মান (লেবেলিং এবং ডিসপ্লে) নিয়ম, ২০২০ অনুযায়ী, সমস্ত উপাদান এবং পুষ্টিগুণের তথ্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।
FSSAI-এর এই নির্দেশনা রেস্তোরাঁগুলিকে তাদের পনিরের উৎস সম্পর্কে স্বচ্ছ হতে বাধ্য করছে। ভোক্তারা এখন জানতে পারবেন যে তারা যে পনির খাচ্ছেন তা দুধ থেকে তৈরি খাঁটি পনির, নাকি কৃত্রিম উপাদান দিয়ে তৈরি। এই পদক্ষেপটি ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য শিল্পে নৈতিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক বিতর্ক ও সচেতনতা
সম্প্রতি মুম্বইয়ের একটি ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইউটিউবার সার্থক সচদেবা গৌরী খানের মালিকানাধীন ‘তোরি’ রেস্তোরাঁয় আয়োডিন পরীক্ষা করে দাবি করেন যে সেখানে পরিবেশিত পনির কৃত্রিম। এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে।
তবে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ (fssai) জানায়, তাদের পনিরে সয়া-ভিত্তিক উপাদান রয়েছে, যার কারণে আয়োডিন পরীক্ষায় রঙ পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আয়োডিন পরীক্ষা শুধুমাত্র স্টার্চের উপস্থিতি নির্দেশ করে, পনিরের খাঁটিত্ব সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করে না।
এই ঘটনা ভোক্তাদের মধ্যে পনিরের গুণগত মান নিয়ে সচেতনতা বাড়িয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে নিজেরাই পনির পরীক্ষা করার পদ্ধতি শেয়ার করছেন। উদাহরণস্বরূপ, খাঁটি পনির গরম করলে বাদামী রঙ ধারণ করে, কিন্তু কৃত্রিম পনির গলে যায় বা ভেঙে পড়ে। এছাড়া, প্যাকেটজাত পনিরের লেবেলে শুধুমাত্র দুধ এবং কোগুলান্ট (যেমন সাইট্রিক অ্যাসিড) উল্লেখ থাকলে তা খাঁটি বলে ধরা হয়।
ভোক্তাদের জন্য পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ভোক্তারা যেন সস্তা পনিরের পরিবর্তে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড বা ঘরে তৈরি পনির ব্যবহার করেন। ঘরে পনির তৈরি করা সহজ এবং নিরাপদ। দুধ গরম করে লেবু বা ভিনেগার দিয়ে জমাট বাঁধিয়ে পনির তৈরি করা যায়। এছাড়া, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সময় পনিরের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা উচিত।
FSSAI-এর নতুন নির্দেশনা ভারতের খাদ্য শিল্পে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে ভোক্তাদেরও সচেতন থাকতে হবে। খাঁটি পনিরের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ উপভোগ করতে সঠিক পছন্দ এবং সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।