রামনবমীতে পামবান ব্রিজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আসন্ন রাম নবমীতে রামেশ্বরমে নতুন ২.০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পামবান রেল ব্রিজের(Pamban Bridge) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন…

Pamban Bridge

আসন্ন রাম নবমীতে রামেশ্বরমে নতুন ২.০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পামবান রেল ব্রিজের(Pamban Bridge) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, এবং এখন এটি ভারতের মূল ভূখণ্ড এবং রামেশ্বরম দ্বীপের মধ্যে রেল সংযোগের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। রামেশ্বরম ভারতের গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থান, প্রতিবছর লাখ লাখ তীর্থযাত্রী আসেন এখানে।

ভারতের প্রথম ভের্টিক্যাল লিফট সি ব্রিজ

   

নতুন পামবান রেল ব্রিজটি ভারতের প্রথম ভের্টিক্যাল লিফট সি ব্রিজ হিসেবে পরিচিত। এই ব্রিজটি ট্রেন চলাচলকে দ্রুত করবে এবং সমুদ্রপথের নৌযান চলাচলও সহজ করবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায় ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই নতুন ব্রিজটি ১১১ বছর পুরনো পামবান ব্রিজটির স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, যা ২০২২ সালে ক্ষয়ক্ষতির কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। 

Advertisements

এই ব্রিজটির একটি বৈশিষ্ট্য হল এর ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল ভার্টিক্যাল লিফট স্প্যান, যা মাত্র ৫ মিনিটে উঁচু হয়ে যায়, যাতে জাহাজগুলো সুষ্ঠুভাবে চলাচল করতে পারে। এটি এক জন অপারেটর দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সাধারণ আবহাওয়ায় নিরাপদে কাজ করতে সক্ষম হলেও, বাতাসের গতি ৫৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার বেশি হলে এটি চলবে না।

আধুনিক বৈশিষ্ট্যগুলি

নতুন পামবান রেল ব্রিজটি নির্মাণ করতে প্রায় ৪ বছর সময় লেগেছে। যার মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কিছু বিলম্ব ঘটেছিল। ব্রিজটিতে মোট ১০০টি স্প্যান রয়েছে, যার মধ্যে একটি ৭২.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের নেভিগেশন স্প্যানও রয়েছে। ২২ মিটার উচ্চতার নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্সের কারণে এখন বড় জাহাজও পার হতে পারবে, যেখানে পুরনো ব্রিজের মাত্র ১.৫ মিটার ক্লিয়ারেন্স ছিল। 

এই ব্রিজটি তার পূর্বসূরির থেকে ৩ মিটার উঁচু এবং কঠিন উপকূলীয় পরিবেশে টিকে থাকার জন্য নির্মিত হয়েছে। এতে স্টেইনলেস স্টিল রিইনফোর্সমেন্ট এবং কম্পোজিট স্লিপার্স ব্যবহৃত হয়েছে। যা ব্রিজটির স্থায়ীত্ব ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে রেলওয়ে বিদ্যুৎকরণের সুবিধা পাওয়ার জন্যও এটি প্রস্তুত।

দ্রুত এবং নিরাপদ ট্রেন পরিষেবা

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, নতুন ব্রিজটি ট্রেনের পাসিং টাইম ৫ মিনিটেরও কমিয়ে দেবে, যেখানে ট্রেনগুলি ৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলবে। পুরনো ব্রিজের সময়সীমা ছিল ২৫-৩০ মিনিট, কারণ সেখানে ট্রেনগুলির গতি ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।

রেল সুরক্ষা কমিশনার ৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতি অনুমোদন করেছেন মূল ব্রিজের জন্য, এবং ভের্টিক্যাল লিফট স্প্যানের জন্য ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা অনুমোদন করা হয়েছে। ন. শ্রীনিবাসন, রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, বলেছেন, “নতুন ব্রিজটি ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তবে একটি বাঁক থাকার কারণে রেল সুরক্ষা কমিশনার ৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতি অনুমোদন করেছে।”

রামেশ্বরমের রেল সংযোগ পুনরুদ্ধার

নতুন পামবান ব্রিজটি রামেশ্বরমের রেল সংযোগ পুনরুদ্ধার করবে, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কারণ পুরনো ব্রিজটি নিরাপদ ছিল না। রামেশ্বরম-তিরুপতি উইকলি এক্সপ্রেস এবং রামেশ্বরম-কন্যাকুমারি ট্রাই-ওয়িকলি এক্সপ্রেস সহ বেশ কিছু ট্রেন পুনরায় চলাচল শুরু করবে এই ব্রিজের মাধ্যমে।

এছাড়াও নতুন ব্রিজের মাধ্যমে রেল সংযোগ বৃদ্ধির ফলে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ তীর্থযাত্রী যারা রামনাথস্বামী মন্দির পরিদর্শনে আসেন, তাদের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে। এর ফলে স্থানীয় পর্যটন এবং অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নতুন পামবান রেল ব্রিজ ভারতের জন্য একটি নতুন সূচনা করবে, যা শুধু রামেশ্বরমের রেল সংযোগের উন্নয়ন নয়, দেশের সমগ্র রেলওয়ে নেটওয়ার্কে এক নতুন স্তরের উন্নতি নিয়ে আসবে। এটি ভারতীয় রেলওয়ের আধুনিকীকরণ এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য নিরাপদ, দ্রুত এবং সুবিধাজনক যাতায়াতের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।