Operation Sindoor: ভারতের অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানে ব্যাপক ধ্বংস, স্বীকার করল ইসলামাবাদ

ভারতের অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) মাধ্যমে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যে হামলা চালানো হয়েছিল, তা ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত ছিল। পাকিস্তানের…

Pakistan’s Own Dossier Admits 28 Indian Strikes in Operation Sindoor

ভারতের অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) মাধ্যমে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যে হামলা চালানো হয়েছিল, তা ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত ছিল। পাকিস্তানের নিজস্ব একটি গোপনীয় নথি, যা তাদের ‘অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস’ নামে পরিচিত, এই তথ্য প্রকাশ করেছে। নথিটি জানায় যে ভারত কমপক্ষে সাতটি অতিরিক্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, যা আগে সরকারিভাবে ঘোষিত হয়নি। পাকিস্তানের এই নথি অনুসারে, ভারত মোট ২৮টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে, যেখানে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে মাত্র ২০টি লক্ষ্যবস্তুর কথা জানিয়েছিল। এই প্রতিবেদনে আমরা অপারেশন সিঁদুরের বিস্তারিত, নতুন প্রকাশিত লক্ষ্যবস্তুগুলো এবং এই ঘটনার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব।

নতুন প্রকাশিত লক্ষ্যবস্তুগুলো
পাকিস্তানের নথি অনুসারে, ভারতীয় হামলার নতুন প্রকাশিত লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে পেশোয়ার, ঝাং, হায়দ্রাবাদ (সিন্ধু), গুজরাত (পঞ্জাব), গুজরানওয়ালা, বাহাওয়ালনগর, অ্যাটক এবং চোর। এই স্থানগুলো ভারতীয় বিমান বাহিনী বা সামরিক অপারেশনের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজিএমও) কর্তৃক প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়নি। পাকিস্তানের এই নথি অপারেশন সিঁদুরের ব্যাপকতা এবং ভারতের সামরিক ক্ষমতার গভীরতা প্রকাশ করে। এই অতিরিক্ত লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে পেশোয়ারে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্থাপনা, অ্যাটকে জাতীয় প্রতিরক্ষা কমপ্লেক্স (এনডিসি), বাহাওয়ালনগরে সেনা ক্যান্টনমেন্ট এবং গুজরাতের খারিয়ানে পাকিস্তানের বৃহত্তম ক্যান্টনমেন্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, ঝাং জেলার শোরকোট ক্যান্টনমেন্ট এবং রাফিকি এয়ারবেসও ভারতের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।

   

পাকিস্তানের ক্ষতি
পাকিস্তানের নিজস্ব নথি অসাবধানতাবশত ভারতের হামলার কারণে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করেছে। এই নথি ইঙ্গিত দেয় যে অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের সামরিক ও জঙ্গি অবকাঠামোর উপর যে ক্ষতি হয়েছে, তা ভারতের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির তুলনায় অনেক বেশি। পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর নুর খান, রাফিকি, মুরিদ, সুক্কুর, পারুর, চুনিয়ান, সারগোধা, রহিম ইয়ার খান, ভোলারি, জ্যাকবাবাদ এবং গুজরানওয়ালার এয়ারবেসগুলোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, লাহোরে একটি রাডার সাইট এবং করাচির মালির ক্যান্টনমেন্টে একটি মিসাইল সাইটও ধ্বংস করা হয়েছে। ম্যাক্সার টেকনোলজিসের প্রকাশিত উচ্চ-রেজোলিউশনের স্যাটেলাইট চিত্রে এই ক্ষতির প্রমাণ দেখা গেছে।

পাকিস্তানের এই ক্ষতির পরিমাণ এতটাই ব্যাপক ছিল যে তারা দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানায়। ১০ মে ভোর ১টায় পাকিস্তান ভারতের সামরিক ঘাঁটি এবং গুজরাত ও পঞ্জাবের কৌশলগত স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভারতের দেশীয় বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই হুমকিগুলোর বেশিরভাগই প্রতিহত করে। ভারতের প্রতিশোধমূলক হামলায় পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর রাডার সিস্টেম এবং কমান্ড সেন্টার ধ্বংস হয়, যা তাদের বিমান শক্তিকে “অন্ধ, স্থবির এবং পঙ্গু” করে দেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই জানিয়েছেন যে অপারেশন সিঁদুরে প্রায় ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানি সামরিক কর্মী নিহত হয়েছেন।

অপারেশন সিঁদুরের পটভূমি
অপারেশন সিঁদুর ২০২৫ সালের ৭ মে ভোরে শুরু হয়, যা ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চালানো হয়। পাহালগাম হামলায় ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। এই হামলার জন্য লস্কর-ই-তৈবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো দায়ী ছিল। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে, যার মধ্যে বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতর মারকাজ সুবহান আল্লাহ এবং মুরিদকে লস্কর-ই-তৈবার সদর দফতর ছিল। এই হামলায় জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ জন সদস্য এবং তার ভাই আবদুল রউফ আজহার নিহত হন।

পাকিস্তান যখন প্রতিশোধমূলক হামলার চেষ্টা করে, তখন ভারত ৮ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত তিন দিনের নিবিড় হামলা চালায়, যার মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি এবং বিমান বাহিনীর স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করা হয়। ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ৩০০ কিলোমিটার গভীরে প্রবেশ করে এবং ২৫ মিনিটের মধ্যে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। এই অপারেশন ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে তৈরি অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রদর্শন করে, যা চীন-সরবরাহিত পাকিস্তানি প্ল্যাটফর্মের তুলনায় উৎকৃষ্ট প্রমাণিত হয়।

Advertisements

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং যুদ্ধবিরতি
অপারেশন সিঁদুরের ব্যাপক ক্ষতির পর, পাকিস্তান ১০ মে বিকেলে ভারতের কাছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ লাচিনে পাকিস্তান-তুরস্ক-আজারবাইজান ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেন, যেখানে তিনি কাশ্মীর, পানি ভাগাভাগি এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আলোচনার বিষয়ে কথা বলেন। তবে, ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুধুমাত্র পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) এবং সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে হবে।

পাকিস্তানের নথি ভারতের হামলার ব্যাপকতা প্রকাশ করলেও, এটি ইসলামাবাদের পূর্বের দাবিকে খণ্ডন করে, যেখানে তারা ভারতের উপর বড় ক্ষতি সাধনের দাবি করেছিল। এই নথি পাকিস্তানের সামরিক দুর্বলতা এবং ভারতের নির্ভুল হামলার কার্যকারিতার একটি স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তাৎপর্য এবং ভবিষ্যৎ
অপারেশন সিঁদুর ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী নীতিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার বলেছেন যে সন্ত্রাস এবং আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান জানিয়েছেন যে এই অপারেশন আধুনিক যুদ্ধের প্রকৃতি প্রদর্শন করেছে, যেখানে প্রযুক্তি, সাইবার অপারেশন এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পাকিস্তানের বিমান বাহিনী এই হামলায় পাঁচ বছরের জন্য পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের এই অপারেশন কেবল জঙ্গি ঘাঁটিই ধ্বংস করেনি, বরং পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোর উপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে। গুজরাত সরকার অপারেশন সিঁদুরের স্মরণে কচ্ছ জেলার ভুজ সেক্টরে ‘সিঁদুর ভ্যান’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ উদ্যান নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহসিকতা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।

অপারেশন সিঁদুর ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাকিস্তানের নিজস্ব নথি এই অপারেশনের ব্যাপকতা এবং ভারতের সামরিক শক্তির প্রমাণ বহন করে। পেশোয়ার, ঝাং, হায়দ্রাবাদ, গুজরাত, গুজরানওয়ালা, বাহাওয়ালনগর, অ্যাটক এবং চোরে ভারতের হামলা পাকিস্তানের সামরিক ও জঙ্গি অবকাঠামোর উপর গভীর ক্ষত সাধন করেছে। এই অপারেশন ভারতের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন। ভবিষ্যতে, এই অপারেশন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।