ইসলামাবাদ: গম ও আটা সরবরাহ নিয়ে তিন প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপি), পাঞ্জাব ও সিন্ধ এর মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এই অস্থিরতা শুধু রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনই বাড়াচ্ছে না, দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকেও বিপদের মুখে ফেলছে।
বৃহস্পতিবার কেপি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে পাঞ্জাব প্রশাসনের কাছে দাবি জানায় যে, আন্তঃপ্রাদেশিক গম ও আটা পরিবহনের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে তুলে নেওয়া হোক। কেপি সরকারের বক্তব্য, এই কৃত্রিম বাধা সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে দিচ্ছে, বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং গমের দামের লাগামছাড়া বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ভাতের থালি হুমকির মুখে পড়ছে।
নজর কাড়বে ‘রিয়া’! জাতীয় সংহতি দিবসের প্যারেডে দেশি সারমেয়
ডন পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেপি প্রদেশের খাদ্য সচিব এক চিঠিতে লিখেছেন, “গম ও আটার অবাধ চলাচলে বাধা দেওয়া শুধুমাত্র সংবিধানবিরোধী নয়, বরং এটি সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তার উপর আঘাত।” তিনি আরও জানান, কেপি প্রদেশ প্রতিদিন প্রায় ১৪,৫০০ টন গম পাঞ্জাব থেকে আমদানি করে। বর্তমানে পাঞ্জাব মাত্র ২,০০০ টন আটা পরিবহনের সীমিত অনুমতি দিচ্ছে, যা তাদের চাহিদার একেবারে সামান্য অংশ।
কেপি’র মুখ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ সোহেল আফ্রিদি এই নিষেধাজ্ঞাকে “সংবিধানবিরোধী ও মানবিক সংকট সৃষ্টি করার মতো পদক্ষেপ” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি পাকিস্তানের সংবিধানের ১৫১(১) ধারার উল্লেখ করে বলেন, “সংবিধান আন্তঃপ্রাদেশিক বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, কিন্তু পাঞ্জাব প্রশাসন সেই অধিকার লঙ্ঘন করছে।”
অন্যদিকে, সিন্ধ প্রদেশে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। পিপিপি সিন্ধ সভাপতি নিসার খুহরো অভিযোগ করেছেন, পাঞ্জাব সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সিন্ধে গমের বীজ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে যখন রবি মরসুমের বপন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তিনি এই পদক্ষেপকে “সিন্ধ-বিরোধী নীতি” বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
খুহরো বলেন, “আমাদের কৃষকরা ইতিমধ্যেই পাঞ্জাবের সরবরাহকারীদের টাকা দিয়েছে, কিন্তু প্রশাসনিক অজুহাতে চালান বন্ধ করা হয়েছে। এটা কেবল অর্থনৈতিক শোষণ নয়, কৃষি নির্ভর মানুষের জীবিকার উপর আঘাত।” তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের মোট ৫.৫২ লক্ষ টন বার্ষিক গমের বীজ উৎপাদনের মধ্যে প্রায় ৫.১৬ লক্ষ টনই পাঞ্জাব প্রদেশে উৎপাদিত হয়।
অর্থাৎ, সিন্ধ সম্পূর্ণভাবে পাঞ্জাবের ওপর নির্ভরশীল। এই গম যুদ্ধ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিপিপি-শাসিত সিন্ধ ও পিএমএল-এন শাসিত পাঞ্জাবের মধ্যে এই সংঘাত মূলত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতারই বহিঃপ্রকাশ।
পিপিপি পাঞ্জাবের সাধারণ সম্পাদক হাসান মুরতাজ বলেন, “পাসকো (Pakistan Agricultural Storage & Services Corporation) বিলুপ্ত করার ফলে কৃষকরা এখন মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে বন্দি। এর ফলে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) প্রতি ৪০ কেজিতে ৩,৫০০ রুপি কার্যকরভাবে পৌঁছাচ্ছে না।” তিনি সতর্ক করেন, “যদি এই সংকট দ্রুত না মেটে, তাহলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন কমাবে, যার ফল পুরো দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় পড়বে।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, গম আমদানির অভাবে কেপিতে আটার দাম ইতিমধ্যেই ২০-২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। ময়দা মিল মালিকদের দাবি, যদি পরিস্থিতি আরও ১০ দিন চলতে থাকে, তাহলে রুটি ও নান পর্যন্ত বিলাসপণ্যে পরিণত হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আন্তঃপ্রাদেশিক গম পরিবহন স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও, প্রশাসনিক অচলাবস্থায় তা কার্যকর হয়নি।


