অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রত্যুত্তর কি হতে পারে ?

আজ ভোরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান (pakistan) ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। এই অভিযান…

pakistan future reactions for operation sindoor

আজ ভোরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান (pakistan) ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। এই অভিযান পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন।

ভারত দাবি করেছে, এই হামলা কেবল জঙ্গি ঘাঁটি এবং তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে, কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়নি। তবে, পাকিস্তান এই হামলাকে “অঘোষিত যুদ্ধ ” হিসেবে আখ্যায়িত করে পাল্টা জবাবের হুমকি দিয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রত্যুত্তর কী হতে পারে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।

   

পাকিস্তানের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া (pakistan)

পাকিস্তানের (pakistan) প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ অপারেশন সিঁদুরকে “কাপুরুষোচিত বেসামরিক হামলা” বলে নিন্দা করেছেন। পাকিস্তান (pakistan) দাবি করেছে, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে এবং পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।

ভারত এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, তাদের কোনো যুদ্ধবিমান হারিয়ে যায়নি এবং পাকিস্তানের আর্টিলারি হামলায় তিনজন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, বাণিজ্য স্থগিত এবং সীমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।

সামরিক প্রত্যুত্তরের সম্ভাবনা

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান সরাসরি সামরিক পাল্টা হামলার পথ বেছে নিতে পারে, বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ভারতীয় যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও দাবি করেছে।

তবে, পাকিস্তানের (pakistan) সামরিক সক্ষমতা সীমিত। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান মাত্র চার দিনের জন্য টানা যুদ্ধ চালানোর গোলাবারুদ মজুত রাখে। অর্থনৈতিক সংকট এবং অস্ত্রের ঘাটতি পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

পাকিস্তান (pakistan) এলওসি বরাবর আর্টিলারি হামলা বাড়াতে পারে বা সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। তবে, ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাকিস্তান বড় মাপের সামরিক অভিযান এড়িয়ে যেতে পারে।

কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ

পাকিস্তান (pakistan) কূটনৈতিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে। তারা রাষ্ট্রসংঘ এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মতো মঞ্চে ভারতের হামলাকে “আগ্রাসন” হিসেবে তুলে ধরতে পারে। পাকিস্তান ইতিমধ্যে দাবি করেছে যে ভারত বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তবে, ভারতের দাবি, হামলাগুলো ছিল সন্ত্রাসবিরোধী এবং নির্ভুল, যা ৬০টিরও বেশি দেশের সমর্থন পেয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পারে এবং ভারতীয় পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তবে, পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতিমধ্যে সংকটে রয়েছে, এবং এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের নিজেদের উপরই বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে।

‘অপারেশন সিঁদুরে’র পর পাক হামলা, নিহত ১৫, ফাঁকা করা হচ্ছে গ্রাম

অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক প্রভাব

পাকিস্তানের (pakistan) অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই হামলা সরকারের উপর চাপ বাড়াতে পারে। জনগণের মধ্যে ভারত-বিরোধী মনোভাব জোরালো হতে পারে, যা শেহবাজ শরিফ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে। তবে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, যিনি দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন, সম্ভবত পরিমিত পদক্ষেপ নেবেন, কারণ তারা জানেন যে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ তাদের অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতার জন্য বিপর্যয়কর হবে।

আঞ্চলিকভাবে, পাকিস্তান চীনের সমর্থন চাইতে পারে। চীন, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে, কূটনৈতিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে। তবে, চীনের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে তারা সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়াতে চাইবে না।

শান্তির সম্ভাবনা

কিছু সূত্র জানায়, পাকিস্তানের (pakistan) প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন, যদি ভারত সামরিক অভ্যুত্থান বন্ধ করে , তবে পাকিস্তান কোনো পাল্টা হামলা করবে না। এটি ইঙ্গিত দেয় যে পাকিস্তান উত্তেজনা কমাতে চায়। তবে, এলওসি বরাবর পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ এবং ভারতীয় শহরে “প্রতিশোধমূলক” হামলার হুমকি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

অপারেশন সিঁদুর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে একটি সংকটপূর্ণ জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে । পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রত্যুত্তর হতে পারে সীমিত সামরিক হামলা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। তবে, তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক চাপ তাদের বড় মাপের সংঘাত থেকে বিরত রাখতে পারে।

ভারতের দৃঢ় অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন পাকিস্তানের পদক্ষেপকে সীমিত করতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক মধ্যস্থতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শান্তি বজায় রাখতে দুই পক্ষকেই সংযমী পদক্ষেপ নিতে হবে।

Advertisements