ভারত-পাকিস্তান (pakistan) সীমান্তে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। পাকিস্তান (pakistan) পুঞ্চ সেক্টরে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করেছে, যা সীমান্তে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়াও, শুক্রবার সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের উরি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর পাকিস্তান ছোট অস্ত্র ও আর্টিলারি ফায়ার শুরু করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এর যথাযথ জবাব দিচ্ছে। এই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশিত হয়নি।
এদিকে, ভারতের পশ্চিম সীমান্তে উল্লেখযোগ্য উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। ৭ ও ৮ মে রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একাধিকবার ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে এবং ড্রোন অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ভারতীয় সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে।
সোফিয়া কুরেশি জানিয়েছেন
শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানিয়েছেন, পাকিস্তান (pakistan)৩৬টি স্থানে ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন মোতায়েন করেছিল, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় বাহিনী কাইনেটিক এবং নন-কাইনেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধ্বংস করে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই ড্রোনগুলো ছিল তুর্কি নির্মিত অ্যাসিসগার্ড সোঙ্গার মডেল।
কর্নেল কুরেশি বলেন, “৭ ও ৮ মে রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সামরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারী ক্যালিবারের অস্ত্র দিয়ে গোলাবর্ষণ করে। প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ৩৬টি স্থানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।”
তিনি যোগ করেন, “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই ড্রোনগুলোর অনেকগুলো ধ্বংস করেছে। এই বড় আকারের আকাশসীমা লঙ্ঘনের উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ। ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের ফরেনসিক তদন্ত চলছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, এগুলো তুর্কি অ্যাসিসগার্ড সোঙ্গার ড্রোন।”
পাকিস্তানের হামাস-শৈলী হামলা (pakistan)
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়ে, পাকিস্তান বৃহস্পতিবার জম্মুতে হামাস-শৈলীর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক এলাকা লক্ষ্য করে, এএনআই-কে প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, এই হামলা ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের মতো ছিল, যেখানে স্বল্পমূল্যের একাধিক রকেট ব্যবহার করে শহরগুলোকে লক্ষ্য করা হয়।
এই হামলা ছিল ভারতের অপারেশন সিঁদুরের প্রতিশোধ হিসেবে, যেখানে বুধবার ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে নির্ভুল হামলা চালায়। এই অপারেশনটি ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়া ছিল, যাতে ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়।
ভারতের কাউন্টার-ড্রোন অপারেশন
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী এলওসি এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত (আইবি) বরাবর বড় আকারের কাউন্টার-ড্রোন অপারেশনে ৫০টিরও বেশি পাকিস্তানি ড্রোন ধ্বংস করে। এএনআই-কে সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ৭-৮ মে রাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একাধিক সামরিক স্থাপনায় পাকিস্তানের বড় আকারের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করে। এই প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের লাহোরে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিরপেক্ষ করা হয়।
মুখ পুড়ল পাকিস্তানের! পিএসএলের জন্য পিসিবির প্রস্তাব খারিজ
পুঞ্চে গোলাবর্ষণের প্রভাব
পাকিস্তানের (pakistan) গোলাবর্ষণ পুঞ্চে মারাত্মক ক্ষতি করেছে। ৭ মে ভোরে ভারী গোলাবর্ষণের সময় পাকিস্তান থেকে ছোঁড়া একটি শেল পুঞ্চের ক্রিস্ট স্কুলের পিছনে পড়ে। এই শেল স্কুলের দুই ছাত্রের বাড়িতে আঘাত করে, যার ফলে তারা প্রাণ হারায় এবং তাদের বাবা-মা আহত হন। বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি এই ঘটনাকে “পাকিস্তানের জন্য নতুন নীচতা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও কৌশল
ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের (pakistan) আক্রমণের জবাবে সমানুপাতিক এবং দায়িত্বশীলভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং জানিয়েছেন, পাকিস্তান তার বেসামরিক আকাশসীমা বন্ধ করেনি, যা আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, “পাকিস্তান বেসামরিক বিমানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, জেনেশুনে যে ভারতের দ্রুত প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া আসবে।”
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
পাকিস্তানের তুর্কি ড্রোন ব্যবহার এবং হামাস-শৈলী হামলার প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেপ এরদোগান পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এদিকে, জাতিসংঘ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ বিশ্ব নেতারা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং কূটনৈতিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের (pakistan) পুঞ্চ ও উরি সেক্টরে ভারী গোলাবর্ষণ এবং ড্রোন হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। ভারতের অপারেশন সিন্দুর এবং কাউন্টার-ড্রোন অপারেশন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান প্রকাশ করে। পাকিস্তানের বেসামরিক এলাকায় হামলা এবং তুর্কি ড্রোন ব্যবহার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ভারতের সমানুপাতিক প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন এই সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।