ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বের নেপথ্যের বহু গল্প এখনও সামনে আসছে। ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের ছ’মাস পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধক্ষেত্রের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা দৃঢ়তার কাহিনি এখন প্রকাশ্যে আসছে একে একে। ঠিক তেমনই সামনে এল কাশ্মীরের উরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে রক্ষা করা ১৯ জন CISF জওয়ানের অবিশ্বাস্য সাহসিকতার ঘটনা—যারা না থাকলে আরও এক বৃহৎ বিপর্যয় নেমে আসত সীমান্তের ওই এলাকায়।
অপারেশন সিদুঁরের পর পাকিস্তানের হামলা
৭ মে মধ্যরাতের পরপরই পহেলগাম হামলার পাল্টা জবাব দেয় ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ধ্বংস হয় পাকিস্তানের ভেতরে থাকা নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি। এর কিছু ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান শুরু করে তীব্র গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা—লক্ষ্য ছিল জম্মু–কাশ্মীরের বারামুলা জেলার জেলম নদীর ধারে অবস্থিত উরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (UHEP-I ও II)।
সীমান্তরেখার একেবারে গা ঘেঁষে থাকা এই প্রকল্প শুধু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, আশপাশের গ্রামীণ বসতিগুলিও সরাসরি বিপদের মুখে ছিল।
১৯ জন CISF জওয়ান কীভাবে রোখেন বিপর্যয় Pakistan Drone Attack Uri CISF
৭ মে গভীর রাতে প্রকল্প এলাকায় অ্যালার্ট জারি করা হয়। CISF-এর কমান্ড্যান্ট রবি যাদবের নেতৃত্বে থাকা ১৯ জনের দল দ্রুত আঁচ করে নেয় পাকিস্তানের উদ্দেশ্য। গোলাবর্ষণের মধ্যেই একের পর এক শত্রুপক্ষের ড্রোন প্রকল্পের দিকে এগোতে শুরু করে।
ASI গুরজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, CISF জওয়ানরা প্রধান প্রবেশদ্বারের কাছে একাধিক ড্রোন জ্যাম করে নামিয়ে দেয়। বড় আকারের ড্রোনগুলি অন্য নিরাপত্তা সংস্থা নিষ্ক্রিয় করে। কোনও ড্রোনই প্রকল্পে ক্ষতি করতে পারেনি।
গোলার আঘাতে যখন আশপাশের আবাসন কেঁপে উঠছে, CISF জওয়ানরা তখন শুরু করেন মানবিক উদ্ধার অভিযান—রাতের মধ্যে দরজায় দরজায় গিয়ে জাগিয়ে তুলে নিরাপদ বাঙ্কারে নিয়ে যান ২৫০ জন সাধারণ মানুষ ও NHPC কর্মীদের। প্রাণহানি শূন্য। “সবচেয়ে কঠিন ছিল ঘুমিয়ে থাকা পরিবারগুলিকে বুঝিয়ে বের করে আনা,” বলেন ASI সিংহ।
শত্রুপক্ষের ড্রোন নিষ্ক্রিয়
CISF-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জওয়ানরা রিয়েল-টাইম থ্রেট অ্যানালাইসিস করেন, বাঙ্কার শক্তিশালী করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখেন এবং শত্রুপক্ষের ড্রোন নিষ্ক্রিয় করেন। “তীব্র গোলাবর্ষণের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও ২৫০ জনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে CISF-এর সাহস অতুলনীয়,”—বলা হয় বিবৃতিতে।
এই অসামান্য সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে CISF-এর ১৯ জন জওয়ানকে দেওয়া হয়েছে ডিরেক্টর জেনারেলের ডিস্ক।
উরি আবারও হামলার নিশানায়
এটাই প্রথম নয়। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উরি সেনা শিবিরে জইশ জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারান ১৯ জন জওয়ান। ছ’ঘণ্টার অপারেশনে চার জঙ্গিকে নিকেশ করে ভারতীয় সেনা। তারপরই আসে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক—পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গভীরে ঢুকে ধ্বংস করা হয় একাধিক জঙ্গি লঞ্চপ্যাড।
পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলার মাঝেও CISF-এর মাত্র ১৯ জন জওয়ান যেভাবে জাতীয় সম্পদ ও শত শত মানুষের প্রাণ বাঁচালেন—এটি নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিক সংঘাতের সবচেয়ে উজ্জ্বল বীরগাথাগুলির একটি। দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থায় তাঁদের এই বীরত্ব দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
