ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এড়াতে ‘ঈশ্বরে’ ভরসা পাক-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ (Khawaja Asif) সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে, যদিও বিভিন্ন দেশ এই দুই প্রতিবেশী দেশের…

Pakistan Defence Minister Khawaja Asif

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ (Khawaja Asif) সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে, যদিও বিভিন্ন দেশ এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে। পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) পাকিস্তানের অযাচিত গুলিবর্ষণের পর উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। আসিফের এই মন্তব্য দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে। 

Advertisements

আসিফের বক্তব্য

পাকিস্তানের সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আসিফ বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে, কমছে না। যদিও অনেক দেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত যদি কোনো হামলা চালায়, পাকিস্তান তার উপযুক্ত জবাব দেবে। “ভারত যদি কোনো লঙ্ঘন করে, আমরা তার জবাব দেব এবং আমাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ভারতের পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে। আমাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়,” তিনি বলেন। তিনি আরও বলেন, “ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন যুদ্ধের পরিস্থিতি এড়ানো যায়। আমি আশা করি ভারত বিবেকবুদ্ধি দেখাবে।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ভারতের পদক্ষেপের চেয়ে বড় হবে।

   

পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোতে জঙ্গিরা পর্যটকদের উপর হামলা চালায়, যাতে ২৬ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এটি ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলাগুলোর একটি। ভারত দাবি করেছে, হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এই হামলা ভারতের জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এলওসি-তে উত্তেজনা

পহেলগাঁও হামলার পর থেকে পাকিস্তান এলওসি-তে টানা ছয় রাত ধরে অযাচিত গুলিবর্ষণ করছে। সোমবার পুঞ্চ এবং কুপওয়াড়া জেলায় পাকিস্তানি সেনারা ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়, যার জবাব ভারতীয় সেনারা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে দিয়েছে। এই ঘটনাগুলো ২০২১ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই লঙ্ঘনগুলো নিয়ে মঙ্গলবার ডিজিএমও হটলাইনে আলোচনা হয়েছে, যেখানে ভারত পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে।

পাকিস্তানের বিতর্কিত মন্তব্য

আসিফ সম্প্রতি স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, পহেলগাঁও হামলা ভারত “মঞ্চস্থ” করেছে এবং এটি একটি “মিথ্যা পতাকা” অপারেশন। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান তিন দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর “নোংরা কাজ” করেছে, যার মধ্যে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেওয়া অন্তর্ভুক্ত। এই মন্তব্য ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, এবং জাতিসংঘে ভারত পাকিস্তানকে “দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র” হিসেবে অভিহিত করেছে। ভারতের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি যোজনা প্যাটেল বলেন, আসিফের স্বীকারোক্তি পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের সমর্থনের প্রমাণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত আসিফের এক্স অ্যাকাউন্ট এবং ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে।

কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটি ১৯৬০ সালের ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত করেছে, আটারি স্থল সীমান্ত বন্ধ করেছে, এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা ছাড় বাতিল করেছে। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে। আসিফ বলেন, ইন্দুস জল চুক্তির লঙ্ঘনকে তারা “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে বিবেচনা করবে।

পাকিস্তান তাদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করেছে এবং উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। আসিফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান কেবল “অস্তিত্বের সরাসরি হুমকি” হলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। তিনি আরও বলেন, তারা খলিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে হত্যার জন্য ভারতকে দায়ী করছে এবং পাকিস্তানের শহরগুলোতে ভারত জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আসিফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান উপসাগরীয় দেশগুলো, চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। চীন সংযমের আহ্বান জানিয়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারত এবং পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করবে, তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে।

এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত পোস্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের জনগণ এই উত্তেজনায় ভীত। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ভারত-পাকিস্তান সম্ভাব্য যুদ্ধ আগামী দু-তিন দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

ভারতের অবস্থান

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পহেলগাঁও হামলার পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) হামলার তদন্তে নেমেছে, এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ পাকিস্তানের নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

পহেলগাঁও হামলা এবং এলওসি-তে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে একটি বিপজ্জনক মোড়ে নিয়ে গেছে। খাজা আসিফের মন্তব্য, বিশেষ করে যুদ্ধের সম্ভাবনা এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ভারতের কঠোর কূটনৈতিক এবং সামরিক পদক্ষেপ এবং পাকিস্তানের পাল্টা ব্যবস্থা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ এবং উভয় দেশের সংযমই এখন এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ।