অপারেশন ‘সিঁদুরে’ আহত হয়ে ভারতকে পিছু হটার অনুরোধ পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

পাকিস্তানের (pakistan) প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বুধবার অপারেশন সিঁদুরের পর বলেছেন, ভারত যদি বর্তমান উত্তেজনা কমায়, তবে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা “সমাপ্ত” করতে প্রস্তুত। তাঁর এই…

pakistan requests india

পাকিস্তানের (pakistan) প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বুধবার অপারেশন সিঁদুরের পর বলেছেন, ভারত যদি বর্তমান উত্তেজনা কমায়, তবে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা “সমাপ্ত” করতে প্রস্তুত। তাঁর এই মন্তব্য এসেছে ভারতের পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) জঙ্গি ঘাঁটিতে সামরিক হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর।

ব্লুমবার্গ টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, পাকিস্তান কেবলমাত্র আক্রমণের শিকার হলেই প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি বলেন, “আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে বলে আসছি, আমরা ভারতের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ শুরু করব না।

   

কিন্তু যদি আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়, আমরা জবাব দেব। যদি ভারত পিছু হটে, আমরা অবশ্যই এই উত্তেজনা শেষ করব।” আলোচনার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রী বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার বিষয়ে অবগত নন।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বুধবার ভোরে পাকিস্তান ও পিওকে-র নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়। পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান (pakistan) সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী একটি গণমাধ্যম সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তীব্র ভাষায় এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তাঁর সশস্ত্র বাহিনী “শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলা করতে খুব ভালোভাবে জানে”।

তিনি বলেন, “ভারতের এই যুদ্ধের কাজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের (pakistan) যথাযথ জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে, এবং একটি শক্তিশালী জবাব দেওয়া হচ্ছে। আমরা কখনোই শত্রুকে তার নোংরা উদ্দেশ্যে সফল হতে দেব না।”

পাকিস্তান (pakistan) দাবি করেছে, ভারতের হামলায় বেসামরিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তবে, ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তাদের হামলা শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি গুলোর উপর কেন্দ্রীভূত ছিল এবং কোনো বেসামরিক বা অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়নি।

৫০ দিনের মাথায় উচ্চমাধ্যমিক ফল, সেরা বর্ধমানের রূপায়ন, কোন জেলা শীর্ষে?

পহেলগাঁও হামলা ও ভারতের পদক্ষেপ

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা, যেখানে লস্কর-ই-তৈয়বা জঙ্গিরা ২৬ জনকে হত্যা করে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে ইন্ডাস জল চুক্তি স্থগিত করা, আটারি সীমান্তে একমাত্র স্থল সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের মাত্রা হ্রাস করা। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীকে হামলার পদ্ধতি, লক্ষ্যবস্তু এবং সময় নির্ধারণে “পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অপারেশন সিঁদুর পরিচালিত হয়, যা ২০১৯ সালের বালাকোট হামলার পর ভারতের সবচেয়ে বড় সীমান্তবর্তী নির্ভুল হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

খাজা আসিফের মন্তব্য ও পাকিস্তানের অবস্থান (pakistan) 

খাজা আসিফের মন্তব্য পাকিস্তানের (pakistan) একটি দ্বৈত নীতির ইঙ্গিত দেয়। একদিকে, তিনি উত্তেজনা কমানোর জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যদিকে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে আক্রমণের শিকার হলে পাকিস্তান জবাব দেবে। তিনি বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত সহ্য করব না।” তিনি পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার উপর আস্থা প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে, যেখানে সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করলেও উভয় দেশকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চিন পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে এই হামলাকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের “মিথ্যা দাবি” প্রত্যাখ্যানের পর এই হামলা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পাকিস্তানের (pakistan) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এই হামলাকে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের “উদ্ধত লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি রাষ্ট্রসংঘের কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, ভারত জানিয়েছে, তাদের হামলা ছিল “কেন্দ্রীভূত এবং অ-উত্তেজক” এবং শুধুমাত্র জঙ্গি গোষ্ঠী ক্যাম্প লক্ষ্য করা হয়েছে।

অভিযানের বিবরণ

অপারেশন সিঁদুরে ভারত উচ্চ-নির্ভুলতা এবং দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল, হ্যামার স্মার্ট বোমা এবং লয়টারিং মিউনিশন অন্তর্ভুক্ত। হামলাগুলো বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, কোটলি, মুজাফফরাবাদ এবং সিয়ালকোটের সন্ত্রাসবাদী ক্যাম্পগুলোতে কেন্দ্রীভূত ছিল। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ক্যাম্পগুলো লস্কর-ই-তৈয়বা, জৈশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা পরিচালিত হতো।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

খাজা আসিফের শান্তি প্রস্তাব সত্ত্বেও, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত। পাকিস্তানের আকাশসীমা ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং সামরিক অবস্থান পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশ্লেষকদের মতে, দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এই সংঘাত আঞ্চলিক শান্তির জন্য গুরুতর হুমকি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা এবং কূটনৈতিক আলোচনা এই উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে, পাকিস্তানের শান্তি প্রস্তাব এবং ভারতের কঠোর অবস্থানের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। উভয় দেশের সংযম এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন হবে।

Advertisements