নয়াদিল্লি, ২৪ নভেম্বর ২০২৫: দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তে এক নতুন অন্ধকার ছায়া পড়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত অপরাধী গ্রুপগুলো বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিষ ছড়াচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে, যখন মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুপচাপ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশের বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা যাচাইয়ের শর্ত তুলে নেয়, তখন থেকে একটা বিপজ্জনক ‘পাইপলাইন’ খুলে যায়।
মাত্র 13,999 টাকায় Motorola নিয়ে এল 24GB র্যাম, 50MP AI ক্যামেরা ও 7000mAh ব্যাটারির নতুন ফোন
এই ফাঁক দিয়ে ঢুকে আসছে মাদক, ভুয়া ভারতীয়-বাংলাদেশি মুদ্রা এবং বিশ্বব্যাপী ‘ডেভিলস ব্রেথ’ নামে পরিচিত মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ। এই নেটওয়ার্কগুলো আর আলাদা ঘটনা নয়, এটা একটা সুনির্দিষ্ট সীমান্ত-পারের অপরাধী কাঠামো, যা বাংলাদেশের ‘স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি’ সম্প্রদায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে।গতকালই বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ দুজন পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেফতার করে, যারা এই ‘ডেভিলস ব্রেথ’ চক্রের সঙ্গে যুক্ত।
এই রাসায়নিকটি বৈজ্ঞানিক নাম স্কোপোলামিন কলম্বিয়ার ‘বোরাচেরো’ গাছ থেকে তৈরি, যা শ্বাসের মাধ্যমে বা পানীয় মিশিয়ে দেওয়া হয়। এর প্রভাবে ভুক্তভোগী ‘জম্বি’র মতো হয়ে যায় স্মৃতি হারায়, আনুগত্য করে এবং কোনো প্রতিরোধ করতে পারে না।
অপরাধীরা তাদের থেকে টাকা-জিনিসপত্র, পরিচয়পত্র সব কেড়ে নেয়। গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তিদের কাছ থেকে পুলিশ পেয়েছে এই ড্রাগের নমুনা এবং পাকিস্তানি পাসপোর্ট। তদন্তকারীরা বলছেন, এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাকিস্তান থেকে ঢাকায় ঢুকে সোজা জিনেভা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
মোহাম্মদপুর, মিরপুরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে চার লক্ষেরও বেশি ‘স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি’ বাস করে। এই নেটওয়ার্ক রংপুর, সৈয়দপুরসহ অন্যান্য জেলার ক্যাম্পেও ছড়িয়ে পড়েছে।আরও ভয়াবহ যে, এই পাকিস্তানি অপরাধীরা ক্যাম্পের মহিলা, শিশু ও যুবকদের শোষণ করছে।
তারা তাদেরকে কুরিয়ার বানিয়েছে মাদক বিতরণ, ভুয়া নোট চালানো এবং ‘ডেভিলস ব্রেথ’ দেওয়ার জন্য সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, এই গ্রুপগুলো এখন ভারতে অনুপ্রবেশ করছে ক্যাম্পের ৪-৫ জন বাসিন্দাকে নিয়ে, যারা একজন পাকিস্তানি নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য অঞ্চলে অপারেশন চালায়।
এটা শুধু অপরাধ নয়, এটা আইএসআই-সমর্থিত একটা সমন্বিত হুমকি, যা দুর্বল জনগোষ্ঠীকে ঢাল আর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সীমান্তের ফাঁকফোকর কাজে লাগাচ্ছে।এই নেটওয়ার্কের পেছনে আইএসআই-এর ভূমিকা স্পষ্ট। গত অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে ২৫ টন পপি সীড (মাদকের কাঁচামাল) জব্দ হয়েছে, যা পাকিস্তানি ‘পাখির খাদ্য’ কার্গোতে লুকানো ছিল। এই পদ্ধতি আইএসআই-এর ক্লাসিক ট্রেডক্রাফট।
ইউনুস সরকারের নীতি সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ পাকিস্তানি কার্গোর জন্য বাধ্যতামূলক পরিদর্শন মুক্তি এবং ডিসেম্বরে নিরাপত্তা যাচাই শিথিলকরণ এই অনুপ্রবেশকে সহজ করে দিয়েছে। এমনকি ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের চুক্তিও হয়েছে। এর ফলে দাউদ ইব্রাহিমের ডি-কোম্পানির মতো নার্কো-লর্ডরা অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদক এবং ভুয়া নোটের তস্করি চালাচ্ছে। বাংলাদেশের বন্দরগুলো চট্টগ্রাম, মংলা এখন এই অপারেশনের ট্রানজিট পয়েন্ট।
বাংলাদেশে ‘ডেভিলস ব্রেথ’-এর প্রথম জব্দ হয় ২০২৩-এ নারায়ণগঞ্জে, কিন্তু গত বছর থেকে এর ছড়ানো অভূতপূর্ব। হংকং, কলম্বিয়ার মতো দেশে এই ড্রাগের ভয়াবহতা পরিচিত এটা শুধু সম্পত্তি নয়, পরিচয়ও কেড়ে নেয়। এখন এটা বাংলাদেশের শহরগুলোতে ছড়াচ্ছে, যেখানে অলক্ষ্যে ভুক্তভোগীরা পরে সব হারিয়ে ফিরে আসে।
ভারতে এর প্রভাব পড়ছে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে, যেখানে ভুয়া নোটের সঙ্গে এই রাসায়নিক মিশে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা পাকিস্তানের ‘হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার’ কৌশলের অংশ—ভারতকে অস্থিতিশীল করতে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, যাতে নার্কো-টেরর মিশে যায়।
