জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (POK) মুজাফ্ফারাবাদে (muzaffarabad) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপের খবর পাওয়া গেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল সংঘটিত হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার প্রক্সি সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) দায় স্বীকার করেছে। এই ঘটনার পর ভারতের কঠোর কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুজাফ্ফারাবাদে (muzaffarabad) তৎপরতা বাড়িয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ
সূত্রের খবর অনুযায়ী দেখা গেছে , মুজাফ্ফারাবাদে (muzaffarabad) পাকিস্তান সেনাবাহিনী বড় ধরনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত সেনা, ভারী অস্ত্রশস্ত্র এবং নজরদারি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে এবং নজর এড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে সিভিল ট্রাক । স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুজাফ্ফারাবাদের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় টহল বাড়িয়েছে।
এই পদক্ষেপকে অনেকে ভারতের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কৌশল হিসেবে দেখছেন। পাহালগাম হামলার পর ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করা এবং পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যা পাকিস্তানের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
জানা গিয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুজাফ্ফারাবাদে (muzaffarabad) স্থানীয় বাসিন্দাদের গতিবিধির উপর নজরদারি বাড়িয়েছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করছে। এই পদক্ষেপের পেছনে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য হলো অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকানো।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককেও সক্রিয় করেছে, যাতে সীমান্ত এলাকায় কোনো অস্বাভাবিক কার্যকলাপের তথ্য দ্রুত পাওয়া যায়। এমনকি পাক সেনা হাই এলার্ট জারি করেছে হাসপাতাল গুলিতেও। তবে কি পাকিস্তান পূর্ণ সামরিক অভ্যুত্থান চাইছে।
পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষিত
পহেলগাঁও হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই হামলায় নৌবাহিনীর একজন অফিসার এবং গোয়েন্দা ব্যুরোর একজন কর্মকর্তাসহ ২৬ জন নিহত হয়েছেন। হামলার জন্য দায়ী সংগঠন টিআরএফ-কে পাকিস্তানের সরাসরি সমর্থন রয়েছে বলে ভারত অভিযোগ করেছে।
এই ঘটনার পর ভারতের গৃহ মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলের নির্দেশ জারি করেছে, যার মধ্যে মেডিকেল, ডিপ্লোম্যাটিক এবং দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ব্যতীত অন্য সব ভিসা ২৭ এপ্রিল ২০২৫ থেকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, দিল্লিতে বসবাসকারী প্রায় ৫০০০ পাকিস্তানি নাগরিকের তালিকা গোয়েন্দা ব্যুরো দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
জানা গিয়েছে , পাকিস্তান এই পরিস্থিতিকে “ভারতের আগ্রাসী নীতি” হিসেবে প্রচার করছে এবং মুজাফ্ফারাবাদে (muzaffarabad) সেনা মোতায়েনকে তাদের “নিরাপত্তার স্বার্থে” জরুরি পদক্ষেপ বলে দাবি করছে। তবে, ভারতের কূটনৈতিক মহল মনে করে, পাকিস্তান এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে চাইছে, যাতে পহেলগাঁও হামলায় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পহেলগাঁও হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই প্রধান কাশ প্যাটেল হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারত সরকারকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে ভারতকে সমর্থনের কথা বলেছেন। তবে, ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেননি, যা তিনি তার প্রথম মেয়াদে করেছিলেন।
দিল্লিতে বসবাসকারী ৫০০০ পাকিস্তানির তালিকা প্রকাশ ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর
মুজাফ্ফারাবাদের পরিস্থিতি (muzaffarabad)
মুজাফ্ফারাবাদে (muzaffarabad) সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কঠোর নজরদারি এবং চলাচলের উপর বিধিনিষেধের কারণে স্থানীয়রা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া, সম্প্রতি ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের ঝিলাম নদীর অতিরিক্ত জল ছেড়ে দেওয়ায় মুজাফ্ফারাবাদে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা পাকিস্তানের জন্য অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের অবস্থান
ভারত সরকার পহেলগাঁও হামলাকে “পাকিস্তানের স্পনসরড সন্ত্রাসবাদ” হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের অঙ্গীকার করেছে। মুজাফ্ফারাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে ভারত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানের কার্যকলাপের উপর নজর রাখছে এবং প্রয়োজনে জবাবি পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মুজাফ্ফারাবাদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
পহেলগাঁও হামলার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে, এবং মুজাফ্ফারাবাদে সামরিক তৎপরতা এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ভারত অনেক আগে থেকেই প্রত্যাঘাতের জন্য তৈরী হচ্ছিল। এবার প্রত্যাঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান। তবে পূর্ণ যুদ্ধের দিকে দুই দেশ এগোবে কিনা তা সময় ই বলবে।