Ashabari Narrowly Escapes Pahelgam Massacre
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের (pahelgam) জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র বৈসারান উপত্যকায় মঙ্গলবার ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই হামলায় মহারাষ্ট্রের ছয়জন সহ বেশ কয়েকজন পর্যটক নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পুনের ব্যবসায়ী সন্তোষ জগদালে, থানের অতুল মানে, সঞ্জয় লেলে, হেমন্ত জোশী, পুনের কৌস্তুভ গানবোটে এবং নবি মুম্বইয়ের দিলীপ দোসালে। এই ঘটনায় সন্তোষ জগদালের পরিবারের সদস্যরা যে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, তা তাঁদের কন্যা আশাবরী জগদালে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।
লখনউকে হারিয়ে রহস্যময় পোস্টে গোয়েঙ্কাকে বার্তা রাহুলের
হামলার ভয়াবহতা: আশাবরীর বর্ণনা (pahelgam)
আশাবরী জানিয়েছেন, তাঁরা পহেলগাঁওয়ের (pahelgam) বৈসারান উপত্যকায় পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ পাহাড় থেকে কিছু লোক নেমে আসে, যাদের পোশাক স্থানীয় পুলিশের মতো মনে হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরই গুলির শব্দ শুরু হয়। আতঙ্কিত হয়ে আশাবরী, তাঁর মা প্রগতি এবং বাবা সন্তোষ কাছাকাছি একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, এটি জঙ্গি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি। কিন্তু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন জঙ্গিরা তাঁদের তাঁবুর কাছে চলে আসে এবং পাশের একটি তাঁবুতে গুলি চালায়।
এক পর্যায়ে জঙ্গিরা চিৎকার করে বলে, “চৌধুরী, তু বাহার আ জা (চৌধুরী, তুমি বাইরে এসো)।” এরপর তারা সন্তোষ জগদালেকে তাঁবু থেকে টেনে বের করে। আশাবরী জানান, জঙ্গিরা তাঁদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করার জন্য দায়ী করেছিল। তারা পর্যটকদের মধ্যে হিন্দু এবং মুসলিমদের আলাদা করে জিজ্ঞাসা করে।
সন্তোষকে একটি ইসলামিক শ্লোক (সম্ভবত কালিমা) আবৃত্তি করতে বলা হয়। তিনি তা করতে ব্যর্থ হলে জঙ্গিরা তাঁর মাথায়, কানের পিছনে এবং পিঠে তিনটি গুলি করে। এরপর তারা আশাবরীর মামাকেও একাধিক গুলি করে হত্যা করে।
উদ্ধার ও পলায়ন
আশাবরী, তাঁর মা প্রগতি এবং এক আত্মীয় কোনোরকমে স্থানীয়দের এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্যে বৈসারান উপত্যকা (pahelgam) থেকে উদ্ধার পান। তবে তখনও তাঁরা জানতেন না যে সন্তোষ এবং তাঁর মামা বেঁচে আছেন কি না। প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এই হামলায় নিহত অন্যদের মধ্যে ছিলেন থানের অতুল মানে। ৪৫ বছর বয়সী অতুল সেন্ট্রাল রেলওয়েতে সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বন্ধু বিবেকানন্দ সামন্ত জানান, তারা একসঙ্গে লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতেন এবং পাহালগামে একসঙ্গে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন। নবি মুম্বইয়ের দিলীপ দোসালে ৩৯ জনের একটি পর্যটক দলের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরে সংগঠিত ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচা
নাগপুরের এক দম্পতি এবং তাঁদের ছেলে হামলা শুরুর ঠিক আগে বৈসারান (pahelgam) মেডো থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। তাঁরা জানান, “আমরা ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার পরপরই এই ঘটনা ঘটে। অনেকক্ষণ ধরে গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। সবাই সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল।” পালানোর সময় প্রায় ৪ ফুট প্রস্থের একটি একমাত্র গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টায় ওই দম্পতির স্ত্রী পড়ে গিয়ে পায়ে এবং অন্য একটি জায়গায় ফ্র্যাকচার হয়।
হামলার প্রভাব
এই হামলা পাহালগামের পর্যটন শিল্পের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বৈসরান উপত্যকা, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, এখন ভয় আর আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এই হামলার জন্য দায়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখনও স্পষ্টভাবে চিহ্নিত না হলেও, কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। মহারাষ্ট্রের নিহতদের পরিবারগুলি শোকের মধ্যে রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান
পাহালগামের এই হামলা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং জম্মু ও কাশ্মীরে চলমান সন্ত্রাসবাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জের প্রতীক। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে এই ধরনের ঘটনা রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
এই ঘটনা পর্যটকদের মনে দীর্ঘমেয়াদী ভয়ের ছাপ ফেলবে। তবে, স্থানীয়দের সাহায্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতার কারণে অনেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। এই দুঃখজনক ঘটনার পর সবার প্রতি সহানুভূতি এবং সমর্থন প্রকাশ করা হচ্ছে।