জম্মু কাশ্মীরের কাঠুয়াতে এক স্থানীয় মহিলা দাবি করেছেন পহেলগাঁও (pahalgam) হামলার চারজন জঙ্গি কে সেখানেই দেখা গিয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই সেনাবাহিনী এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের বিশেষ অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।
এই হামলায় ২৬ জন, প্রধানত পুরুষ পর্যটক, নিহত হয়েছেন, যা গত কয়েক বছরে কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলির একটি। কর্মকর্তাদের মতে, পুলওয়ামা এবং বারামুল্লায়ও তল্লাশি ও তদন্ত অভিযান চলছে। বারামুল্লার পট্টন এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল ফ্রন্ট (জেকেএনএফ)-এর বিরুদ্ধে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
বারামুল্লায় জেকেএনএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, বারামুল্লা পুলিশ পট্টনের বাসিন্দা গুলাম মোহাম্মদ গানাইয়ের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায়। এই অভিযানটি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পরিচালিত হয় এবং জেকেএনএফ-এর সঙ্গে যুক্ত উস্কানিমূলক উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত সমস্ত উপকরণ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তদন্তের জন্য প্রমাণ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের অগ্রগতির ভিত্তিতে আরও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই অভিযানটি সন্ত্রাসবাদী ইকোসিস্টেম ভেঙে ফেলার এবং অবৈধ কার্যকলাপ রোধের জন্য চলমান প্রচেষ্টার অংশ। জেকেএনএফ-এর বিরুদ্ধে ভারত-বিরোধী প্রচারণা এবং উস্কানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
RBI-র কঠোর পদক্ষেপ, জলন্ধরের ইম্পেরিয়াল ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল
পহেলগাঁও হামলার পটভূমি (pahalgam)
পহেলগাঁওয়ের (pahalgam) বাইসারান মেডোতে , একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, মঙ্গলবার সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), পাকিস্তানি সন্ত্রাসী হাফিজ সাঈদের নেতৃত্বাধীন লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটি প্রকাশ করেছে।
বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এবং রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে সর্বদলীয় বৈঠকে বাইসারানে নিরাপত্তা বাহিনীর অনুপস্থিতি নিয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। সরকার জানিয়েছে, এলাকাটি সাধারণত অমরনাথ যাত্রার সময় সুরক্ষিত থাকে, কিন্তু স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা তাড়াতাড়ি পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া শুরু করায় নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়নি।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা
হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করেছে, পাকিস্তানি ভিসা বাতিল করেছে এবং দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা হ্রাস করেছে।
জবাবে, পাকিস্তান ১৯৭২ সালের শিমলা (pahalgam) চুক্তি স্থগিত করেছে, যা দ্বিপাক্ষিকভাবে কাশ্মীর ইস্যু নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিগুলির হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি করে। এই পদক্ষেপ শিমলা চুক্তির মূল শর্ত লঙ্ঘন করে, যা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা নিষিদ্ধ করেছিল।
নিরাপত্তা অভিযানের তীব্রতা
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং এসওজি পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) তীব্র তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। পুলওয়ামা এবং বারামুল্লায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পট্টনের অভিযানে জেকেএনএফ-এর সঙ্গে যুক্ত উপকরণ উদ্ধার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই অভিযানগুলি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে চলছে। পহেলগাঁও (pahalgam) হামলার পর স্থানীয় প্রশাসন পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, যাতে পর্যটকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।
জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক চাপ
শোকার্ত পরিবারগুলি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, বলছে, “আমাদের রক্ষা করতে না পারলে ভোট চাইতে আসবেন না।” সামাজিক মাধ্যমে এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতাকে তুলে ধরে। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা হিসেবে সমালোচনা করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাসীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে পরিবারগুলি দ্রুত ন্যায়বিচার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি দাবি করছে।
পহেলগাঁও (pahalgam) হামলা জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তার দুর্বলতা এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন সংকট তৈরি করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তল্লাশি অভিযান এবং জেকেএনএফ-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়। তবে, শোকার্ত পরিবারগুলির ক্ষোভ এবং জনগণের অসন্তোষ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নিরাপত্তা জোরদার এবং স্বচ্ছ তদন্ত এখন জরুরি, যাতে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।