পহেলগাঁওয়ের তদন্তে উঠে এল ১৪ স্থানীয় জঙ্গির নাম

Pahalgam Probe Reveals Names of 14 Local Militants জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) গত ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন্দ্রশাসিত…

pahalgam terrorists

Pahalgam Probe Reveals Names of 14 Local Militants

   

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) গত ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলে সক্রিয় ১৪ জন স্থানীয় সন্ত্রাসবাদীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী , এই ব্যাক্তিদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

নাম প্রকাশিত জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে আগত বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্র সরবরাহ ও স্থানীয় স্তরে সহায়তা প্রদানে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এই সন্ত্রাসীরা পাকিস্তান-সমর্থিত তিনটি প্রধান জঙ্গি সংগঠন—হিজবুল মুজাহিদিন, লস্কর-ই-তৈবা (LeT) এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদ (JeM)-এর সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে তিনজন হিজবুল মুজাহিদিন, আটজন LeT এবং তিনজন JeM-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

প্রকাশিত তালিকায় নাম রয়েছে, আদিল রেহমান ডেন্টু (২১), আসিফ আহমেদ শেখ (২৮), আহসান আহমেদ শেখ (২৩), হারিস নাজির (২০), আমির নাজির ওয়ানি (২০), ইয়াওয়ার আহমেদ ভাট, আসিফ আহমেদ খান্ডে (২৪), নাসির আহমেদ ওয়ানি (২১), শাহিদ আহমেদ কুতায় (২৭), আমির আহমেদ দার, আদনান সাফি দার, জুবাইর আহমেদ ওয়ানি (৩৯), হারুন রশিদ গনাই (৩২), এবং জাকির আহমেদ গানি (২৯)।

জঙ্গিদের প্রোফাইল (pahalgam)

জঙ্গিদের প্রোফাইল অনুযায়ী আদিল রেহমান ডেন্টু ২০২১ সালে LeT-তে যোগ দেন এবং বর্তমানে সোপোর জেলার কমান্ডার হিসেবে কাজ করছেন। আসিফ আহমেদ শেখ JeM-এর আওয়ান্তিপোরা জেলার কমান্ডার, ২০২২ সাল থেকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত।

আহসান আহমেদ শেখ ২০২৩ সাল থেকে পুলওয়ামায় LeT-এর জঙ্গি হিসেবে সক্রিয়। হারিস নাজির ও আমির নাজির ওয়ানি পুলওয়ামায় যথাক্রমে ২০২৩ ও ২০২৪ সাল থেকে LeT ও JeM-এর সঙ্গে যুক্ত। ইয়াওয়ার আহমেদ ভাট ২০২৪ সাল থেকে পুলওয়ামায় JeM-এর সঙ্গে সক্রিয়। আসিফ আহমেদ খান্ডে ২০১৫ সাল থেকে শোপিয়ানে হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত, পাকিস্তানি জঙ্গিদের সহায়তা করছে। নাসির আহমেদ ওয়ানি ২০১৯ সাল থেকে শোপিয়ানে LeT-এর সঙ্গে সক্রিয়।

শাহিদ আহমেদ কুতায় ২০২৩ সাল থেকে শোপিয়ানে LeT এবং এর প্রক্সি গ্রুপ দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)-এর সঙ্গে যুক্ত। আমির আহমেদ দার ও আদনান সাফি দার শোপিয়ানে যথাক্রমে ২০২৩ ও ২০২৪ সাল থেকে LeT এবং TRF-এর সঙ্গে কাজ করছে। জুবাইর আহমেদ ওয়ানি আন্তনাগে হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান অপারেশনাল কমান্ডার, ২০১৮ সাল থেকে সন্ত্ৰাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলায় অভিযুক্ত।

হারুন রশিদ গনাই আন্তনাগে হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত, ২০১৮ সালে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্প্রতি দক্ষিণ কাশ্মীরে ফিরে এসেছে। জাকির আহমেদ গানি কুলগামে LeT-এর সঙ্গে যুক্ত, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা ও লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত।

জেনসোলের বিরুদ্ধে IREDA-র কঠোর পদক্ষেপ, জাল নথি তদন্ত

পহেলগাঁও হামলা ও স্থানীয় জঙ্গিদের ভূমিকা

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের (pahalgam) বাইসরান মেডোতে পাঁচ জঙ্গি ২৬ জন পর্যটককে গুলি করে হত্যা করে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে LeT-এর প্রক্সি গ্রুপ TRF। হামলাকারীদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক—আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা—এবং দুজন স্থানীয় সন্ত্রাসী—আদিল গুরি এবং আহসান। প্রত্যেকের জন্য ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ১৪ স্থানীয় জঙ্গির সঙ্গে হামলাকারীদের যোগসূত্র খুঁজছে (pahalgam)।

হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষিণ কাশ্মীরে, বিশেষ করে আন্তনাগ (pahalgam) এবং পুলওয়ামায়, ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। সিনিয়র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই তালিকা একটি বৃহৎ গোয়েন্দা তথ্যভাণ্ডারের অংশ, যা ভবিষ্যৎ হামলা রোধ এবং সন্ত্রাসী লজিস্টিক নেটওয়ার্ক ভাঙতে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে তদন্তে সহায়তা করছে। NIA দল হামলার স্থান পরিদর্শন, ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ এবং দায়ীদের চিহ্নিত করার কাজে নিয়োজিত।

সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক ভাঙার প্রচেষ্টা

পহেলগাঁও (pahalgam )হামলা বিদেশি ও স্থানীয় জঙ্গিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান নেক্সাসের উপর আলোকপাত করেছে। এই ১৪ সন্ত্রাসী পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের কাছ থেকে তথ্য সরবরাহ, অস্ত্র সংগ্রহ এবং হামলার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, স্থানীয় যুবকদের নিয়োগের মাধ্যমে পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের একটি ‘লোকালাইজড’ রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

নিরাপত্তা বাহিনী এই নেটওয়ার্ক ভাঙতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি পুলওয়ামা এবং আন্তনাগে দুই LeT সন্ত্রাসীর বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, যেখানে বিস্ফোরক সঞ্চিত ছিল। এছাড়া, বারামুল্লায় একটি অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

সরকার ও জনগণের প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলার পর বলেন, “জঙ্গিরা এবং তাদের সমর্থকরা কল্পনাতীত শাস্তির মুখোমুখি হবে।” কেন্দ্রীয় সরকার কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ হামলার নিন্দা করে স্থানীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারতের বিভিন্ন অংশে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের বাইরে ভারতীয় প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। স্থানীয়ভাবে, কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন, কারণ হামলার পর পর্যটকরা উপত্যকা ছেড়ে চলে গেছেন।

১৪ স্থানীয় সন্ত্রাসীর এই তালিকা প্রকাশ জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে। পহেলগাঁও হামলা কাশ্মীরে শান্তি ও পর্যটন পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার উপর আঘাত হানলেও, নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত অভিযান এবং কেন্দ্রের কঠোর নীতি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভাঙতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।