ভারতীয় রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেখানে বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়াস চলছে, ঠিক তখনই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের (P Chidambaram) এক মন্তব্য নাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক মহলকে। একদিকে তিনি বিজেপির সাংগঠনিক শক্তির প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের স্থায়িত্ব নিয়ে। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা ও সমালোচনা।
চিদম্বরম স্পষ্টভাবে বলেছেন, “বিজেপির মতো এত মজবুত সংগঠিত কোনও রাজনৈতিক দল নেই। প্রতিটি বিভাগে বিজেপি শক্তিশালী। এটা আর পাঁচটা রাজনৈতিক দল নয়। নির্বাচন কমিশন থেকে থানা পর্যন্ত সংস্থা বিজেপির নিয়ন্ত্রণ করা বা করায়ত্ত করার ক্ষমতা রয়েছে।” তাঁর বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, তিনি বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল এবং প্রশাসনিক দখলদারিত্বের ওপর নজর রেখে চলেছেন এবং সেই বাস্তবতা বিরোধীদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “ইন্ডিয়া জোট এখনও অটুট কি না, তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। যদি অটুট থাকে, তা হলে খুবই খুশি হব। কিন্তু মনে হচ্ছে, এই জোট ভঙ্গুর। যদিও আবার তা জোড়া লাগানো যায়। সময় রয়েছে। অনেক কিছু ঘটার বাকি।” অর্থাৎ, তিনি একদিকে যেমন বিরোধী ঐক্যের সম্ভাবনার কথা বলছেন, অন্যদিকে আবার তার ভিত কতটা মজবুত, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
এই মন্তব্য সামনে আসার পর বিজেপি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। বিজেপির তরফে বলা হয়, চিদম্বরমের বক্তব্যেই প্রমাণিত যে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোট দুটোই নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে এবং তাদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। বিজেপির নেতারা বলেন, “যখন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারাই নিজেদের জোটের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান, তখন সাধারণ মানুষ কেন তাদের ভরসা করবে?”
তবে শুধু বিজেপিই নয়, কংগ্রেসের অন্দরেও চিদম্বরমের বক্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ বলেন, “চিদম্বরম নিজে বিজেপির মোকাবিলায় কী করছেন, সেটা বড় প্রশ্ন। এমন সময়ে দলের সিনিয়র নেতার উচিত ছিল দলীয় ঐক্য ও আত্মবিশ্বাস জোরদার করা, বিরোধী শিবিরে বিভ্রান্তি তৈরি করা নয়।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী দলগুলি মিলে ‘ইন্ডিয়া’ নামক একটি বৃহৎ জোট গঠন করে। উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শক্তি প্রদর্শন। কিন্তু রাজ্যভিত্তিক আসন বণ্টন ও নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব জোটে ফাটল ধরিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই জোট একবারেই নির্বাচনমুখী এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার অভাবেই তা কার্যকরভাবে টিকতে পারছে না।
এই প্রেক্ষিতে চিদম্বরমের বক্তব্য ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “তামিলনাড়ুতে জোটের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ভোটের সময় জোট তৈরি করা যায় না। জোট গঠনের পর তা পাঁচ বছর ধরে পালন করতে হয়। কেরল, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে রাজনৈতিক জোট বহু বছর ধরে টিকে রয়েছে, হার-জিত সত্ত্বেও।”
চিদম্বরমের এই মন্তব্য একদিকে যেমন রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে, অন্যদিকে বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বিরোধীদের মধ্যে জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কেউই সন্দিহান নন, কিন্তু কার্যকর কৌশল এবং দৃঢ় নেতৃত্বের অভাবে সেই জোট কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
চিদম্বরমের কথায়, “সময় আছে, অনেক কিছু ঘটার বাকি।” কিন্তু আদৌ কি সেই সময়ে বিরোধীরা নিজেদের সংগঠিত করতে পারবে, না কি চিদম্বরমের কথাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়ে উঠবে—তা দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশ।