মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওয়াইসির

বোম্বে হাইকোর্ট ২০০৬ সালের মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১২ জনকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে (Owaisi)। এই ঘটনা ভারতের বিচার ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী রায়…

Owaisi seeks justice for mumbai blast

বোম্বে হাইকোর্ট ২০০৬ সালের মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১২ জনকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে (Owaisi)। এই ঘটনা ভারতের বিচার ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী রায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রায় দুই দশক আগে, ১১ জুলাই ২০০৬-এ মুম্বাইয়ের শহরতলির ট্রেনে সাতটি সমন্বিত বিস্ফোরণে ১৮৯ জন নিহত এবং ৮০০-র বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।

এই মামলায় অভিযুক্তদের ২০১৫ সালে একটি বিশেষ আদালত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। তবে, বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি অনিল কিলোর এবং শ্যাম চন্দকের বেঞ্চ ঘোষণা করেছে যে প্রসিকিউশন “মামলাটি প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ” হয়েছে এবং অভিযুক্তরা এই কাজ করেছেন তা মেনে নেওয়া কঠিন।

   

এই রায়ের পর অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, এই মামলার তদন্তকারী মহারাষ্ট্র অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস)-এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাইকোর্টের রায় ও তদন্তের ত্রুটি

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত সাক্ষ্য অপ্রতুল এবং অবিশ্বাসযোগ্য। আদালত সাক্ষীদের বিবৃতি এবং অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার করা বলে দাবি করা উপকরণের কোনো প্রমাণমূলক মূল্য নেই বলে উল্লেখ করেছে। বিশেষ করে, অভিযুক্তদের কাছ থেকে নেওয়া স্বীকারোক্তি সম্পর্কে আদালত বলেছে যে এগুলি নির্যাতনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে এবং সেগুলি “অসম্পূর্ণ এবং অসত্য”।

আদালত আরও উল্লেখ করেছে যে কিছু স্বীকারোক্তি একে অপরের থেকে “কপি-পেস্ট” করা হয়েছে, যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়া, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বোমার ধরন প্রমাণ করতেও প্রসিকিউশন ব্যর্থ হয়েছে। বিচারপতিরা বলেন, “প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করেছে তা অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়।”

ওয়াইসির প্রতিক্রিয়া ও তদন্তকারীদের দায়বদ্ধতা

এই রায়ের পর এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “১২ জন মুসলিম ব্যক্তি ১৮ বছর ধরে এমন একটি অপরাধের জন্য জেলে ছিলেন, যা তারা করেননি। তাঁদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়ে গেছে।

১৮০টি পরিবার যারা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে এবং যারা আহত হয়েছেন, তাঁদের জন্য কোনো ন্যায়বিচার হয়নি। মহারাষ্ট্র সরকার কি এই মামলার তদন্তকারী এটিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?” ওয়াইসি আরও অভিযোগ করেন, ২০০৬ সালে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন দলগুলি নির্যাতনের অভিযোগকে উপেক্ষা করেছিল।

তিনি বলেন, “এই ধরনের হাই প্রোফাইল মামলায়, যেখানে জনরোষ দেখা দেয়, পুলিশ প্রথমে দোষী ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করেন, এবং মিডিয়া যেভাবে এই মামলাগুলি কভার করে, তা অভিযুক্তদের দোষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি আখ্যান তৈরি করে।”

Advertisements

মামলার প্রেক্ষাপট

২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বইয়ের পশ্চিমী রেললাইনের ফার্স্ট ক্লাস কামরায় সাতটি প্রেসার কুকার বোমা বিস্ফোরণ হয়, যা মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে মাতুঙ্গা রোড, মাহিম জংশন, বান্দ্রা, খার রোড, জোগেশ্বরী, ভায়ান্দর এবং বোরিভালি স্টেশনের কাছে বিস্ফোরণ ঘটায়।

এই হামলায় ১৮৯ জনের মৃত্যু হয় এবং ৮২৪ জনের বেশি আহত হন। মহারাষ্ট্র এটিএস-এর তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ছাত্র ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার (সিমি) সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, প্রসিকিউশন এই অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই রায়ের পর রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিবসেনা সাংসদ মিলিন্দ দেওরা বলেছেন, “মুম্বইবাসী হিসেবে আমি এই রায় মেনে নিতে পারি না। আমি মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, সেরা আইনজীবী নিয়োগ করে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হোক।”

বিজেপি নেতা কিরীট সোমাইয়া এই রায়কে “গভীরভাবে হতাশাজনক” বলে অভিহিত করেছেন এবং তদন্ত ও আইনি উপস্থাপনার ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। মহারাষ্ট্রের রাজস্ব মন্ত্রী চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস এই রায়ের যোগ্যতা পর্যালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

২০০৬ সালের মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় বোম্বে হাইকোর্টের রায় ভারতের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ত্রুটিগুলিকে সামনে এনেছে। আসাদুদ্দিন ওয়াইসির প্রশ্ন তদন্তকারী সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতা এবং নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সাবধান! PAN Card আপডেট করলেই সর্বস্ব খোয়া যেতে পারে, চলছে বড় স্ক্যাম

এই রায় অভিযুক্তদের জন্য স্বস্তি এনেছে, কিন্তু বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো পরিবারগুলির জন্য কোনো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেনি। মহারাষ্ট্র সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, এই ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়ায় সংস্কার এবং নিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয়তাকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।