প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলায় ৫০,০০০ মানুষ খুঁজে পেলেন হারানো প্রিয়জনদের

প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ এক ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। মহাকুম্ভে দেশ বিদেশ থেকে প্রায় ৬৬ কোটি দর্শনার্থী একত্রিত হয়েছেন। এটি এক ঐশ্বরিক, দিগন্তস্পর্শী এবং সুসংগঠিত অনুষ্ঠান ছিল।…

Over 50,000 separated reunited at Prayagraj Mahakumbh

প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভ এক ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। মহাকুম্ভে দেশ বিদেশ থেকে প্রায় ৬৬ কোটি দর্শনার্থী একত্রিত হয়েছেন। এটি এক ঐশ্বরিক, দিগন্তস্পর্শী এবং সুসংগঠিত অনুষ্ঠান ছিল। যা ১৪৪ বছর পর প্রয়াগরাজের সঙ্গম তীরে অনুষ্ঠিত হয়। মহাকুম্ভে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল, এটি এক অলৌকিক মিলনমেলা। কিন্তু এর মধ্যেই অনেকেই নিজেদের প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তবে যোগী সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের চেষ্টায় ৫০,০০০ এরও বেশি বিচ্ছিন্ন মানুষকে তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত করা সম্ভব হয়েছে।

এই মহাকুম্ভের মধ্যে বিশেষভাবে মহিলাদের একটি বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। ভারত এবং নেপালের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অনেক মানুষ মহাকুম্ভে আসলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের পরিবারের সাথে পুনর্মিলিত করা হয়েছে।

   

যোগী আদিত্যনাথের উদ্যোগে প্রয়াগরাজে ১০টি ডিজিটাল খোয়া পায়া কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যা বিচ্ছিন্ন মানুষদের দ্রুত তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে সহায়ক হয়। এই কেন্দ্রগুলিতে অত্যাধুনিক এআইভিত্তিক ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম, মেশিন লার্নিং এবং বহু ভাষায় সহায়তার ব্যবস্থা ছিল। এই কেন্দ্রগুলি প্রায় ৩৫,০০০ বিচ্ছিন্ন মানুষের পুনর্মিলন ঘটিয়েছে।

মহাকুম্ভের বিভিন্ন তিথিতে বিশেষভাবে পুনর্মিলনের কাজ হয়েছে। যেমন মকর সংক্রান্তিতে (১৩-১৫ জানুয়ারি) ৫৯৮ জন, মৌনী অমাবস্যায় (২৮-৩০ জানুয়ারি) ৮,৭২৫ জন এবং বসন্ত পঞ্চমীতে (২-৪ ফেব্রুয়ারি) ৮৬৪ জন পুনর্মিলিত হন। এর পাশাপাশি অন্যান্য স্নান তিথি ও সাধারণ দিনগুলোতে ২৪,৮৯৬ জন বিচ্ছিন্ন মানুষের পুনর্মিলন হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যেমন ভারত সেবা কেন্দ্র এবং হেমবতি নন্দন বহুগুনা স্মৃতি সমিতি মহাকুম্ভে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। ভারত সেবা কেন্দ্রের ভূলে ভাটকে ক্যাম্পের পরিচালক উমেশ চন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, এই ক্যাম্পটি মোট ১৯,২৭৪ জন মানুষকে তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত করেছে। ক্যাম্পে ১৮টি শিশু, যারা হারিয়ে গিয়েছিল, তাদেরও নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

মহাকুম্ভের শেষ দিনগুলোতে যেমন প্রয়াগরাজের কৃষ্ণা দেবী, যিনি মুজফফরপুর, বিহারের বাসিন্দা, তাদের পরিবারদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন, তেমনি রায়পুরের ঝাঁজি দেবী, বাঙা জেলা, নেপালের জগন্নাথ ধরু এবং সীতারাম শাহর স্ত্রী বিনি সহ অনেকেই পুনর্মিলিত হন।

এমন উদাহরণগুলি কেবল মানুষের আন্তরিকতা এবং সরকারের পরিকল্পনার সফলতা প্রদর্শনই নয়, বরং এটি আমাদের সামাজিক সংহতির একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। মহাকুম্ভ ২০২৫ একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনার ফলস্বরূপ সফল হয়ে উঠেছে এবং এটি দক্ষ জনসাধারণ ব্যবস্থাপনা এবং মানবিক সেবার এক আদর্শ উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

মহাকুম্ভে বিচ্ছিন্নদের পুনর্মিলন প্রক্রিয়া কেবল একটি গুণগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলেনি, বরং এটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি অসাধারণ উদ্যোগ ছিল। এই উদ্যোগের জন্য ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি, কোটি কোটি মানুষের মধ্যেও এক নতুন আশা ও অনুভূতি সঞ্চারিত হয়েছে।