Ayodhya on Ram Navami: রামনবমীর পবিত্র সন্ধ্যায় অযোধ্যা এক ঐশ্বরিক আলোয় স্নাত হয়ে উঠল। রবিবার সন্ধ্যায় সরযূ নদীর তীরে, বিশেষ করে চৌধুরী চরণ সিং ঘাটে, ২.৫ লক্ষেরও বেশি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে এই উৎসব উদযাপিত হয়েছে। হাজার হাজার ভক্ত এই মহৎ সন্ধ্যা আরতিতে অংশ নিতে ঘাটে সমবেত হন। “জয় শ্রী রাম” ধ্বনিতে শহরটি মুখরিত হয়ে ওঠে, যা দীপোৎসবের স্মৃতি জাগিয়ে তুলেছে—যে উৎসব দীপাবলির সময় পালিত হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে অযোধ্যা তার আধ্যাত্মিক গৌরবকে আরও একবার প্রকাশ করেছে।
মোট প্রদীপের মধ্যে প্রায় ২ লক্ষ প্রদীপ চৌধুরী চরণ সিং ঘাটের ধাপে এবং আশপাশের এলাকায় সযত্নে সাজানো হয়েছিল। এই আলোর সমারোহ এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি করেছে, যা দেখে ভক্তরা মুগ্ধ। রাম জন্মভূমি মন্দির, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ অনুষ্ঠানের পর এখন প্রায় সম্পূর্ণতার পথে, তাও আলো ও ফুলে সুন্দরভাবে সজ্জিত হয়েছিল। এই সজ্জা উৎসবের আমেজকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সূর্য তিলক: রামলালার কপালে স্বর্গীয় আলো
রামনবমীর এই দিনটি আরও বিশেষ হয়ে উঠেছিল রাম জন্মভূমি মন্দিরে সংঘটিত এক বিরল ও আধ্যাত্মিক ঘটনার কারণে। দুপুর ঠিক ১২টায় ‘সূর্য তিলক’ নামে পরিচিত এক অপূর্ব দৃশ্য দেখা গেছে। সূর্যের একটি আলোকরশ্মি সরাসরি রামলালার মূর্তির কপালে এসে পড়ে, যা একটি ঐশ্বরিক তিলকের রূপ নিয়েছে। এই মুহূর্তে পুরোহিতরা রামলালার উদ্দেশে বিশেষ প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। এই স্বর্গীয় দৃশ্য ভক্তদের মনে গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার জন্ম দিয়েছে। এই ‘সূর্য তিলক’ রামনবমীর আধ্যাত্মিক গুরুত্বকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
উৎসবের প্রস্তুতি ও ভক্তদের উচ্ছ্বাস
অযোধ্যায় এই রামনবমী উদযাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সরযূ নদীর তীর পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে এবং প্রদীপগুলি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। চৌধুরী চরণ সিং ঘাটে আলোর এই সমারোহ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন। সন্ধ্যা আরতির সময় ভক্তদের ভিড়ে ঘাট প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। “জয় শ্রী রাম” ধ্বনি এবং প্রদীপের আলোর মেলবন্ধন এক অপার্থিব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। অনেকে এই দৃশ্যকে দীপোৎসবের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যদিও রামনবমী ও দীপাবলি দুটি ভিন্ন উৎসব। তবে উভয় ক্ষেত্রেই আলোর প্রতীকী গুরুত্ব অযোধ্যার সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত।
রাম জন্মভূমি মন্দির এই বছরের শুরুতে উদ্বোধনের পর থেকেই ভক্তদের কাছে একটি বিশেষ তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। রামনবমী উপলক্ষে মন্দিরটি আলো ও ফুলে সজ্জিত করা হয়েছে। মন্দিরের চারপাশে ভক্তদের ভিড় এবং প্রার্থনার ধ্বনি এই দিনটিকে আরও পবিত্র করে তুলেছে। মন্দিরের নির্মাণকাজ এখনও পুরোপুরি শেষ না হলেও, এর গৌরব ও সৌন্দর্য ইতিমধ্যেই ভক্তদের মন জয় করেছে।
যোগী আদিত্যনাথের শুভেচ্ছা
এদিন সকালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রামনবমী উপলক্ষে রাজ্যবাসী ও রামভক্তদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, “ভারতের আত্মা, মানবতার আদর্শ, ধর্মের শ্রেষ্ঠ রূপ, আমাদের প্রিয় পুরুষোত্তম ভগবান শ্রী রামের পবিত্র জন্মদিনে সমস্ত রামভক্ত ও রাজ্যের বাসিন্দাদের শ্রী রামনবমীর শুভেচ্ছা! রাম ভারতের বিশ্বাস, গৌরব এবং দর্শনে রয়েছেন। রাম ভারতের ‘বৈচিত্র্যে ঐক্য’-এর সূত্র।” তাঁর এই বার্তা ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ ও ভক্তির জোয়ার এনেছে।
অযোধ্যার আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
রামনবমী অযোধ্যার জন্য একটি বিশেষ দিন। এই দিনটি ভগবান রামের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয় এবং শহরটি তাঁর জন্মভূমি হওয়ায় এখানে এর গুরুত্ব আরও বেশি। ২০২৪ সালে রাম মন্দিরের ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র পর এটি প্রথম রামনবমী যা এত বড় আকারে উদযাপিত হচ্ছে। প্রায় ৫০০ বছর পর রামলালা তাঁর নিজের মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এবং এই ঘটনা ভক্তদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মন্দিরের উপস্থিতি এবং এই উৎসব অযোধ্যাকে একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে।
চৌধুরী চরণ সিং ঘাটে প্রদীপ জ্বালানোর এই উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। প্রায় ২ লক্ষ প্রদীপ ঘাটের ধাপে সাজানো হয়েছে, যা একটি অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করেছে। বাকি প্রদীপগুলি আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে পুরো সরযূ তট আলোকিত হয়ে ওঠে। এই আলোর সমারোহ কেবল দৃষ্টিনন্দনই নয়, ভক্তদের হৃদয়ে গভীর শান্তি ও ভক্তির অনুভূতি জাগিয়েছে।
স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব
রামনবমীর এই উৎসব অযোধ্যার স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। হোটেল, গেস্টহাউস এবং ধর্মশালাগুলি ভক্তদের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। স্থানীয় বিক্রেতারা ফুল, প্রসাদ এবং ধর্মীয় সামগ্রীর বিক্রি বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছেন। পর্যটন শিল্পও এই উৎসবের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়েছে, কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এই ঐশ্বরিক দৃশ্য দেখতে এসেছেন।
রামনবমীতে অযোধ্যার এই উৎসব শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল প্রতিফলন। ২.৫ লক্ষের বেশি প্রদীপের আলো, সূর্য তিলকের ঐশ্বরিক দৃশ্য এবং ভক্তদের উচ্ছ্বাস এই দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলেছে। রাম জন্মভূমি মন্দিরের উপস্থিতি এই উৎসবকে আরও গৌরবময় করে তুলেছে। অযোধ্যা আজ শুধু রামের জন্মভূমি নয়, এটি ভক্তি, আলো এবং ঐক্যের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে।