চিরঞ্জীবীর ‘নাতি চাই’ মন্তব্যে ঝড়, বিরোধীরা সুর চড়িয়েছেন

সম্প্রতি দক্ষিণী সুপারস্টার চিরঞ্জীবী একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন। তাঁর মন্তব্যটি ছিল, “আমার ছেলের কাছে আবদার করছি—অন্তত এবার যেন তার একটা ছেলে হয়,…

Opposition Leaders Slam Chiranjeevi Over Controversial Grandson Remark

সম্প্রতি দক্ষিণী সুপারস্টার চিরঞ্জীবী একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন। তাঁর মন্তব্যটি ছিল, “আমার ছেলের কাছে আবদার করছি—অন্তত এবার যেন তার একটা ছেলে হয়, আমাদের পারিবারিক পরম্পরা বজায় রাখার জন্য একজন বংশপ্রদীপ চাই।” এই মন্তব্যটি শুনে বিরোধীরা তাকে তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং কংগ্রেস, সিপিএমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই মন্তব্যকে লিঙ্গবৈষম্যমূলক এবং অসংবেদনশীল বলে অভিহিত করেছেন।

চিরঞ্জীবী সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কথা শেয়ার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বাড়িতে থাকলে নাতনিদের সঙ্গে খেলতে ইচ্ছে করে না। বরং নিজেকে লেডিস হোস্টেলের ওয়ার্ডেন বলে মনে হয়।” এই মন্তব্যের পর থেকেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। চিরঞ্জীবী তার ছেলের প্রতি এই আবদার করার সময় এমনটা উল্লেখ করেন যে, তিনি চান তার পরিবারের পারম্পর্য বজায় রাখার জন্য নাতি জন্মগ্রহণ করুক। তবে, তার এই মন্তব্য সঙ্গত কারণে অনেকের কাছেই অসন্তোষজনক হয়েছে।

   

এই মন্তব্যের পর কংগ্রেস সাংসদ জেবি মাথুর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক, ছেলেরা বংশের পরম্পরা বজায় রাখবে—এমন ধারণা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পুত্র এবং কন্যা উভয়ই আমাদের সম্পদ, এবং আমরা সকলকেই সমানভাবে গর্বিতভাবে গ্রহণ করি।” তাঁর মতে, চিরঞ্জীবীর মন্তব্যে যে লিঙ্গবৈষম্যের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

এছাড়াও, সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাটও চিরঞ্জীবীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এমন বিখ্যাত ব্যক্তি যখন লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য করেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। চিরঞ্জীবী হয়তো মজার ছলে এই কথা বলেছেন, কিন্তু আমাদের দেশে এমন ধরনের মনোভাবেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, এবং মহিলাদের ওপর পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করা হয়।” বৃন্দা কারাট আরও বলেন, চিরঞ্জীবীর উচিত তার এই মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।

চিরঞ্জীবীর এই মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তার অনেক অনুরাগী এবং সাধারণ মানুষ এই ধরনের মনোভাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমন মন্তব্যের জন্য একজন প্রখ্যাত ব্যক্তির কাছ থেকে কী ধরনের শিক্ষা পাওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

চিরঞ্জীবী, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত, এধরনের মন্তব্যের কারণে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাঁর ভাই পবন কল্যাণের দল জন সেনা, যা বিজেপির জোটসঙ্গী। তবে, চিরঞ্জীবী নিজে কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন এবং মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায়ও জায়গা পেয়েছেন।

যদিও চিরঞ্জীবী সাফ বলেছেন যে তার মন্তব্যটি মজার ছলে করা হয়েছিল, তারপরও তার বক্তব্যের অর্থে অনেকেই ভিন্নভাবে মন্তব্য করেছেন। এক্ষেত্রে বিরোধীরা দাবি করছেন, এই ধরনের মন্তব্য একজন প্রখ্যাত ব্যক্তির কাছে আশা করা যায় না, এবং এটা আমাদের সমাজে লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যের প্রবণতাকে আরও তীব্র করে তুলবে।

অতএব, চিরঞ্জীবীকে তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছে। তবে, চিরঞ্জীবী কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবেন এবং তার বক্তব্যের জন্য তিনি আদৌ ক্ষমা চাইবেন কিনা, তা দেখার বিষয়।