অপারেশন সিঁদুর: স্যাটেলাইটে স্পষ্ট জঙ্গি ঘাঁটির ধ্বংসচিত্র

operation sindoor satellite images নয়াদিল্লি: ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে এল স্যাটেলাইট চিত্র—যা পরিষ্কার করে দেখাচ্ছে, কী ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়েছে…

operation sindoor satellite images

operation sindoor satellite images

নয়াদিল্লি: ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে এল স্যাটেলাইট চিত্র—যা পরিষ্কার করে দেখাচ্ছে, কী ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়েছে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি। মার্কিন সংস্থা Maxar Technologies-এর তোলা হাই রেজোলিউশন ইমেজে দেখা যাচ্ছে, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইবা-র প্রধান ঘাঁটিগুলিতে ছাদ ধ্বসে পড়েছে, বিস্ফোরণে তৈরি হয়েছে বড় গর্ত, চারদিকে ছড়িয়ে আছে ধ্বংসাবশেষ।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুই ঘাঁটি—মারকাজ সুবহান আল্লাহ (বাহাওয়ালপুর) ও মারকাজ তাইবা (মুরিদকে)—যেখানে একসময় ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ চলত, এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস।

   

 লক্ষ্যবস্তু: সন্ত্রাসের প্রাণকেন্দ্র

২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাহাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহান আল্লাহ ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM)-এর মূল ঘাঁটি ও অপারেশনাল সদর দফতর। এখান থেকেই পরিচালিত হত ভারতে হামলার ছক, যার সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল ২০১৯ সালের পুলওয়ামা বিস্ফোরণের। এই ঘাঁটিতে অবস্থান করতেন জইশ প্রধান মাসুদ আজহার এবং তাঁর ভাই আব্দুল রউফ আসগর। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গিয়েছে, এই স্থাপনাটির একাধিক ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে, মুরিদকের মারকাজ তাইবা ছিল লস্কর-ই-তইবা (LeT)-র আদর্শ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে প্রতিবছর প্রায় ১,০০০ জনকে অস্ত্রচালনা, ফিটনেস ট্রেনিং ও ধর্মীয় চরমপন্থায় দীক্ষিত করা হত। এই স্থান থেকেই ২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় অংশ নেওয়া আজমল কাসব ও ডেভিড হেডলি প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওসামা বিন লাদেন পর্যন্ত এই কেন্দ্রে অর্থসাহায্য করেছিলেন।

 হামলার ধরন: নিখুঁত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ operation sindoor satellite images

‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু হয় ২২ এপ্রিল পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার জবাবে, যেখানে ২৫ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন, যাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন নেপালি পর্যটক। ভারতের মতে, হামলাকারীরা ছিল লস্কর-ই-তইবা দ্বারা প্রশিক্ষিত এবং পাকিস্তানের মাটি থেকে সংগঠিত।

এই অপারেশনে ভারত ক্রুজ মিসাইল, কামিকাজে ড্রোন এবং দীর্ঘ পাল্লার কামান ব্যবহার করে। চারটি লক্ষ্যবস্তু ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে, বাকি পাঁচটি পাক অধিকৃত কাশ্মীর-এ। সব হামলা ভারতের সীমান্তের ভেতর থেকেই চালানো হয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, এটি ছিল “পরিমিত, সুনির্দিষ্ট ও উত্তেজনা-মুক্ত”।

ধ্বংস ও প্রভাব: সন্ত্রাসের মেরুদণ্ডে আঘাত

প্রতিরক্ষা সূত্র অনুযায়ী, এই অপারেশনে ৭০ জনের বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও অন্তত ৬০ জন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েকজন মধ্যম পর্যায়ের কমান্ডার ও প্রশিক্ষক।

Advertisements

স্যাটেলাইট চিত্র ও ইন্টারসেপ্ট করা রেডিও বার্তার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা জানাচ্ছেন, ট্রেনিং ক্যাম্প, অস্ত্রাগার, যোগাযোগ কেন্দ্র ও আশ্রয়স্থল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এর ফলে পাকিস্তান ও ভারতে অবস্থানরত জঙ্গি বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় কার্যত বিপর্যস্ত হয়েছে।

নিরীক্ষা ও প্রস্তুতি: দীর্ঘমেয়াদি গোয়েন্দা নজরদারির ফল

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা গত কয়েক মাস ধরে মুজাফফরাবাদ, কোটলি, রাওয়ালকোট, ভিম্বার, নীলম ভ্যালি, ঝেলাম, ও চকওয়াল-এ চলাফেরা, স্যাটেলাইট ফোন সিগন্যাল ও যান চলাচলের প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড নিশ্চিত করে।

এই নজরদারির ফলেই এত সুনির্দিষ্ট, পরিকল্পিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে।

‘অপারেশন সিন্দুর’ শুধু একটি প্রতিক্রিয়া নয়—এটি ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের একটি প্রকাশ। এটি দেখিয়ে দিল, সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি যতই সীমান্তের ওপারে থাকুক না কেন, ভারত আর নীরব থাকবে না।

Bharat: Satellite images reveal extensive damage to Pakistan & PoK terror camps after India’s ‘Operation Sindoor’. Maxar photos show JeM & LeT bases in ruins.