তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী

Operation Sindoor update: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখার প্রধানদের সঙ্গে একটি জরুরি নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকটি পাকিস্তানের ড্রোন হামলা…

PM Modi holds emergency meet with chief of three armed forces amid escalating India-Pakistan conflicts

Operation Sindoor update: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখার প্রধানদের সঙ্গে একটি জরুরি নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকটি পাকিস্তানের ড্রোন হামলা ভারত সফলভাবে প্রতিহত করার একদিন পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের পটভূমি হলো ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’, যার অধীনে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী অবকাঠামো বলে চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়। এই হামলা গত ২২ এপ্রিল পাহালগামে পর্যটকদের উপর মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদির এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অগ্রগতি এবং কৌশলগত পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা। এই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকটি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন শুক্রবার সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের উরি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর পাকিস্তান ছোট অস্ত্র এবং আর্টিলারি গুলি চালায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী এর যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এছাড়াও, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৭ ও ৮ মে রাতে একাধিকবার ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে এবং ড্রোন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে, যা ভারতীয় সামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে।

   

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানিয়েছেন, পাকিস্তান ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ৩৬টি স্থানে মোতায়েন করেছিল, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় বাহিনী কাইনেটিক এবং নন-কাইনেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধ্বংস করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই ড্রোনগুলো তুরস্কের তৈরি আসিসগার্ড সোঙ্গার মডেল। কর্নেল কুরেশি বলেন, “৭ ও ৮ মে রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে ভারতীয় আকাশসীমা একাধিকবার লঙ্ঘন করে সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এছাড়াও, তারা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারী-ক্যালিবার অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়।” তিনি আরও বলেন, “এই বড় আকারের আকাশসীমা লঙ্ঘনের উদ্দেশ্য সম্ভবত ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। ধ্বংসপ্রাপ্ত ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের ফরেনসিক তদন্ত চলছে।”

পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার জম্মুতে হামাস-শৈলীর মিসাইল ব্যবহার করে একাধিক এলাকায় হামলা চালায়। প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, এই হামলা ইসরায়েলে হামাসের কৌশলের মতো ছিল, যেখানে একাধিক সস্তা রকেট ব্যবহার করে শহরগুলোকে লক্ষ্য করা হয়। এই প্রতিশোধমূলক চেষ্টা ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে, যেখানে বুধবার ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে নির্ভুল হামলা চালায়।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে একটি বড় মাপের কাউন্টার-ড্রোন অপারেশনের সময় ৫০টির বেশি পাকিস্তানি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ৭-৮ মে রাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একাধিক সামরিক স্থাপনায় পাকিস্তানের বড় মাপের ড্রোন এবং মিসাইল হামলার চেষ্টা সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করে। এছাড়াও, পাকিস্তানের লাহোরে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রভাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ এবং ৪৩০টির বেশি ফ্লাইট বাতিলের ফলে বিমান চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। জম্মু, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং জরুরি প্রোটোকল সক্রিয় করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের হামলাকে ব্যর্থ করে আমাদের গর্ব বাড়িয়েছে।” তবে, সীমান্তবর্তী এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাত বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক।” ভারত দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে, তবে কূটনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে এই জরুরি বৈঠক ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করে, এবং পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এই সংকটে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অপরিহার্য। ভারতীয় জনগণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর ঐক্য এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে দেশের শক্তির প্রতীক।

Advertisements