জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল আইআইটি মাদ্রাসের ৬২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিদেশি গণমাধ্যম গুলি দাবি করেছে যে পাকিস্তান এটা করেছে, ওটা করেছে। আমাকে একটি ছবি, একটি চিত্র দেখান, যা ভারতের কোনো কাঠামোর ক্ষতি দেখায়, এমনকি একটি কাচের প্যানেল ভাঙার প্রমাণও।
তারা এসব লিখেছে এবং প্রকাশ করেছে। ছবিগুলোতে শুধু পাকিস্তানের ১৩টি বিমান ঘাঁটির আগে ও পরে চিত্র দেখানো হয়েছে, (Operation Sindoor) যেমন সারগোধা, রহিম ইয়ার খান, চকলালা। আমি শুধু বলছি, বিদেশি গণমাধ্যম ছবির ভিত্তিতে যা প্রকাশ করেছে। আমরা সেই ক্ষতি (পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটির) করতে সক্ষম।” ডোভালের এই মন্তব্যে বিদেশি গণমাধ্যমগুলির চরম পক্ষপাত প্রকাশ পেয়েছে।
অপারেশন সিঁদুর
অপারেশন সিঁদুর ছিল ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। এই অপারেশনটি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়। যে হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিল। দোভাল জানিয়েছেন, ভারত পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি চিহ্নিত করেছিল, যেগুলো সীমান্ত এলাকায় নয়, বরং পাকিস্তানের গভীরে অবস্থিত ছিল।
তিনি বলেন, (Operation Sindoor) “আমরা নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা কোনোটাই মিস করিনি। আমরা অন্য কোথাও আঘাত করিনি। এটি এতটাই নির্ভুল ছিল যে আমরা জানতাম কে কোথায় ছিল। পুরো অপারেশনটি মাত্র ২৩ মিনিটে সম্পন্ন হয়।”
বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সমালোচনা
দোভাল বিদেশি সংবাদমাধ্যমের, বিশেষ করে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো প্রকাশনার, প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান ভারতের উপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। “আমাকে একটি ছবি দেখান যে ভারতের কোনো কাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।
এমনকি একটি ভাঙা কাচের প্যানেলের ছবিও নেই,” তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন। তিনি আরও জানান, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলোতে শুধু পাকিস্তানের ১৩টি বিমান ঘাঁটির আগে ও পরের অবস্থা দেখানো হয়েছে, যেমন সারগোধা, রহিম ইয়ার খান এবং চকলালার ঘাঁটি। এই ছবিগুলো ভারতের নির্ভুল আঘাতের ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে।
পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিতে ক্ষতি
অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) সময় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের একাধিক বিমান ঘাঁটিতে নির্ভুল আঘাত হানে, যার মধ্যে ছিল রাওয়ালপিন্ডির নুর খান , সারগোধা, রহিম ইয়ার খান, সুক্কুর, জ্যাকবাবাদ এবং ভোলারি। ম্যাক্সার টেকনোলজিসের উচ্চ-রেজোলিউশন স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, এই আঘাতে রানওয়ে, হ্যাঙ্গার এবং প্রশাসনিক ভবনগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, রহিম ইয়ার খান বিমান ঘাঁটির রানওয়েতে ৪৩ ফুট ব্যাসের একটি বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়, যার ফলে ঘাঁটিটি অচল হয়ে পড়ে। সারগোধায় মুশাফ বিমান ঘাঁটির রানওয়েতে দুটি বড় গর্ত সৃষ্টি হয়, যার একটি প্রায় ১৫ ফুট ব্যাসের।
স্বদেশী প্রযুক্তির উপর জোর
ডোভাল তাঁর বক্তৃতায় ভারতের স্বদেশী প্রযুক্তির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, অপারেশন সিঁদুরে (Operation Sindoor) ব্যবহৃত অস্ত্র, যেমন ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার সিস্টেম, সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল।
“আমরা আমাদের স্বদেশী প্রযুক্তি বিকাশ করতে হবে। সিঁদুরের উল্লেখ এখানে করা হয়েছে। আমরা গর্বিত যে এতে কতটা স্বদেশী উপাদান ছিল,” তিনি বলেন। তিনি আরও জানান, এই অপারেশনটি ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
ফিরেই বাজিমাত! বুমরাহর এক বলেই স্তব্ধ লর্ডস
ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দোভাল তাঁর বক্তৃতায় ভারতের শতাব্দী প্রাচীন সভ্যতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “আপনারা এমন একটি দেশ ও সভ্যতার অংশ, যা হাজার বছর ধরে লাঞ্ছিত, রক্তাক্ত এবং অপমানিত হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই সভ্যতা এবং জাতির ধারণা বাঁচিয়ে রাখতে অপমান, বঞ্চনা এবং কষ্ট সহ্য করেছেন।” তিনি তরুণ প্রজন্মকে স্বদেশী প্রযুক্তির উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অজিত ডোভালের এই মন্তব্য অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) সাফল্য এবং ভারতের সামরিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতার উপর আলোকপাত করেছে। বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে তিনি ভারতের নির্ভুল আঘাত এবং কোনো ক্ষতি না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এই অপারেশনটি ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি এবং আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।