শনিতে পাকিস্তান সীমান্তে ‘অপারেশন শিল্ড’ ড্রিল চালাবে ভারত

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে দ্বিতীয় সিভিল ডিফেন্স মক ড্রিল ‘অপারেশন শিল্ড’, (Operation Shield) যা পূর্বে ২৯ মে…

Operation Shield Civil Defence Drill Rescheduled for May 31 Amid Border Tensions

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে দ্বিতীয় সিভিল ডিফেন্স মক ড্রিল ‘অপারেশন শিল্ড’, (Operation Shield) যা পূর্বে ২৯ মে নির্ধারিত ছিল, প্রশাসনিক কারণে স্থগিত হয়েছিল। এই ড্রিলটি এখন ৩১ মে অনুষ্ঠিত হবে। জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাট সহ সমস্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এই মক ড্রিলের উদ্দেশ্য হলো ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জরুরি প্রস্তুতি জোরদার করা এবং ড্রোন হামলা ও বিমান হামলার মতো শত্রুপক্ষীয় পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি পরীক্ষা করা।

মক ড্রিলের উদ্দেশ্য কী?
মক ড্রিল হলো একটি সিমুলেটেড প্রশিক্ষণ, যার লক্ষ্য সিভিলিয়ান, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জরুরি পরিষেবা দলগুলিকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, সন্ত্রাসী হামলা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত করা। এই মহড়ার মাধ্যমে এয়ার রেইড সাইরেন, ব্ল্যাকআউট প্রোটোকল, নাগরিক স্থানান্তর, এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় পরীক্ষা করা হয়। ‘অপারেশন শিল্ড’-এর উদ্দেশ্য হলো সীমান্তবর্তী এলাকায় জরুরি প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা বাড়ানো এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, যাতে তারা শত্রুপক্ষীয় হামলা বা অন্যান্য সংকটের সময় নিজেদের রক্ষা করতে পারে। এই ধরনের মহড়া জনগণের মধ্যে আতঙ্ক প্রতিরোধ এবং সংকটকালীন পরিস্থিতিতে শান্ত ও সংগঠিত প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করে।

   

প্রশাসনিক কারণে স্থগিতাদেশ
হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ে বুধবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করা হয়েছিল যে প্রশাসনিক কারণে এই মক ড্রিল স্থগিত করা হয়েছে। তবে, কোনো নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। পাঞ্জাব সরকার কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল যে তাদের সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা বর্তমানে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-এর প্রশিক্ষণে রয়েছেন, তাই মহড়াটি ৩ জুনের জন্য পুনঃনির্ধারণ করা হোক। তবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সমস্ত সীমান্তবর্তী রাজ্যে ৩১ মে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথম মক ড্রিল এবং অপারেশন সিন্দুর
৭ মে, ২০২৫-এ প্রথম জাতীয় সিভিল ডিফেন্স মক ড্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ‘অপারেশন আভ্যাস’ নামে পরিচিত। এই মহড়া ২৪৪টি সিভিল ডিফেন্স জেলায় পরিচালিত হয়েছিল এবং এটি ছিল ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় মহড়া। এই মহড়ায় এয়ার রেইড সাইরেন পরীক্ষা, ব্ল্যাকআউট সিমুলেশন, স্থানান্তর মহড়া এবং জনসাধারণের প্রশিক্ষণ সেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ডিরেক্টরেট জানিয়েছে, এই মহড়ায় দুর্বল এলাকায় সিভিল ডিফেন্স প্রস্তুতির গুরুতর ত্রুটি প্রকাশ পেয়েছে। এর ফলে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ এবং রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর জন্য তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছিল।

এই মহড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু হয়। ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এই অপারেশন চালানো হয়। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ৭ মে ভোরে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসী শিবিরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। এই অপারেশনের ফলে ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চার দিনের সংঘর্ষ চলে, যার মধ্যে ভারত কয়েকটি পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিতেও প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। পাকিস্তান বাহিনী সীমান্ত এবং লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি)-এ ভারী গোলাবর্ষণ করে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় আন্তর্জাতিক সীমান্তে ড্রোন ও মিসাইল ব্যবহার করে হামলার চেষ্টা করে।

Advertisements

অপারেশন শিল্ডের বিশেষত্ব
‘অপারেশন শিল্ড’ মূলত সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে জরুরি প্রস্তুতি বাড়ানোর উপর জোর দেয়। এই মহড়ায় সিভিল ডিফেন্স ওয়ার্ডেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সাধারণ এবং নীরব রিকল, এয়ার রেইড সাইরেনের কার্যকারিতা পরীক্ষা, ব্ল্যাকআউট প্রোটোকল বাস্তবায়ন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার প্রাথমিক ছদ্মবেশ এবং স্থানান্তর পরিকল্পনার মহড়া অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া, জাতীয় ক্যাডেট কোর (এনসিসি), ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম (এনএসএস), নেহরু যুব কেন্দ্র সংস্থা (এনওয়াইকেএস), স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, হোম গার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন এই মহড়ায় অংশ নেবে। এই ড্রিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং শ্যাডো নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যকারিতা, অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার অভিযান এবং ডিপো ব্যবস্থাপনার মতো সিভিল ডিফেন্স পরিষেবাগুলির প্রতিক্রিয়া যাচাই করা হবে।

কেন এই মহড়া গুরুত্বপূর্ণ?
ব্রিগেডিয়ার (অব.) বি.কে. খান্নার মতে, এই ধরনের মক ড্রিল নাগরিকদের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেতন করতে এবং তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় সহায়তা করে। তিনি বলেন, নতুন ও জটিল হুমকির প্রেক্ষাপটে এই ধরনের মহড়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি কেবল নাগরিকদের প্রশিক্ষণই দেয় না, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির একটি শক্তিশালী বার্তা পাকিস্তানের কাছে পৌঁছে দেয়। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও এই ধরনের মহড়া পরিচালিত হয়েছিল, যখন ব্ল্যাকআউট, এয়ার রেইড সাইরেন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছদ্মবেশের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

‘অপারেশন শিল্ড’ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং জরুরি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং তার পরবর্তী অপারেশন সিন্দুরের প্রেক্ষাপটে এই মক ড্রিল সীমান্তবর্তী এলাকায় নাগরিক এবং প্রশাসনের প্রস্তুতি জোরদার করবে। এটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক সমন্বয়ই নিশ্চিত করবে না, বরং জনসাধারণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে যে তারা যেকোনো সংকটের জন্য প্রস্তুত। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই সময়ে, এই ধরনের প্রস্তুতি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।