‘অগ্নিবাণ’ চালিয়ে চুপিসারে নিধন, শাহি ছাড়পত্রে কাঁপল শত্রুর ঘাঁটি

একদিকে যখন ভারতের পড়শি দেশে চলছে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো উচ্চস্তরের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান, তখন দেশের অভ্যন্তরেও চালানো হচ্ছে বড়সড় নিরাপত্তা অভিযান। ছত্তীসগঢ়ের বস্তারের দুর্গম জঙ্গলে…

Operation Sankalp: 26 Maoists Killed in Major Bastar Encounter by Indian Forces

একদিকে যখন ভারতের পড়শি দেশে চলছে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো উচ্চস্তরের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান, তখন দেশের অভ্যন্তরেও চালানো হচ্ছে বড়সড় নিরাপত্তা অভিযান। ছত্তীসগঢ়ের বস্তারের দুর্গম জঙ্গলে যৌথবাহিনীর দুঃসাহসিক অভিযানে ২৬ জন মাওবাদী গেরিলাকে নিকেশ করা হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সংকল্প’ (Operation Sankalp)। অভিযানটি গত ১৮ দিন ধরে বিজাপুর ও তেলঙ্গানার সীমান্তবর্তী অরণ্যে চলছিল।

বুধবার যৌথবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের তীব্র গুলির লড়াই হয়। সেই সংঘর্ষেই মৃত্যু হয় ২৬ জন মাওবাদীর। এই সংঘর্ষ শুধু সংখ্যার নিরিখে নয়, কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সংঘর্ষস্থল থেকে বিপুল পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে মাওবাদী বাহিনীর অস্ত্রভান্ডারে বড়সড় ধাক্কা লাগল বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

   

অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওই অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা মাওবাদী শীর্ষনেতাদের খোঁজ করে বের করা এবং তাদের নিকেশ বা আটক করা। গোপন সূত্রের খবর, এখনও ওই এলাকায় প্রায় ৫০০ জন বা তারও বেশি মাওবাদী সদস্য গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে আসছেন।

এই অভিযানে অংশ নিয়েছে প্রায় ২৪ হাজার আধাসামরিক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য। সিআরপিএফ-এর বিশেষ বাহিনী কোবরা কম্যান্ডো ছাড়াও অভিযানে উপস্থিত রয়েছে রিজার্ভ গার্ড, মহারাষ্ট্র পুলিশ, তেলঙ্গানা পুলিশ এবং ছত্তীসগঢ় পুলিশ। এত বিশাল সংখ্যক বাহিনী ও শক্তি ব্যবহারই প্রমাণ করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মাওবাদী সমস্যা নির্মূলে কতটা তৎপর ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

বস্তারের অরণ্য দীর্ঘদিন ধরেই মাওবাদী কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। এখানকার ভূপ্রকৃতি ও স্থানীয় জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থা এই অঞ্চলকে মাওবাদীদের গোপন ঘাঁটি গড়ে তোলার জন্য সহায়ক করেছে। তবে বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের ফলে মাওবাদী প্রভাব কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। ‘অপারেশন সংকল্প’-এর সাফল্য সেই ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করল বলেই মনে করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা সূত্রের মতে, আগামী দিনেও এই ধরনের অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে। কারণ এখনো অনেক মাওবাদী নেতা বস্তার অঞ্চলের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করে আছে। তাদের খোঁজে চলছে ড্রোন ও হেলিকপ্টার দিয়ে নজরদারি। অভিযানে ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি। এছাড়া, গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য সংগ্রহেও জোর দেওয়া হয়েছে।

দেশজুড়ে যখন নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রশ্নে সরকার ও বাহিনী আরও বেশি কড়া মনোভাব নিচ্ছে, তখন ছত্তীসগঢ়ের এই অভিযান নিঃসন্দেহে একটি বড় সাফল্য। এই ধরনের অভিযান ভবিষ্যতে মাওবাদী কার্যকলাপ হ্রাসে সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisements