অনলাইন গেমিং মামলায় শীর্ষ আদালতে জোর বিতর্ক

নয়াদিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর: ভারতের অনলাইন গেমিং শিল্পের (Online Gaming) ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে এক তীব্র আইনি লড়াই। সরকারের নতুন আইন ‘প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং…

Online Gaming ban

নয়াদিল্লি, ১৯ সেপ্টেম্বর: ভারতের অনলাইন গেমিং শিল্পের (Online Gaming) ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে এক তীব্র আইনি লড়াই। সরকারের নতুন আইন ‘প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং অ্যাক্ট, ২০২৫’-এর মাধ্যমে অনলাইন মানি গেমস (যেমন রামি, পোকার, ফ্যান্টাসি স্পোর্টস) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে একাধিক পিটিশন, যা এখন সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত হয়েছে।

পিটিশনাররা—যেমন A23, হেড ডিজিটাল ওয়ার্কস, বাঘিরা ক্যারাম, ক্লাববুম ১১ স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট—দাবি করছেন যে এই নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক এবং অসমানুপাতিক। তাদের যুক্তিগুলি শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, সাংবিধানিক অধিকার এবং নিয়ন্ত্রণের বিকল্পের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

   

প্রধান যুক্তিগুলির মধ্যে একটি হলো সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন। পিটিশনাররা বলছেন, আইনটি আর্টিকেল ১৯(১)(গ) লঙ্ঘন করে, যা নাগরিকদের ব্যবসা, পেশা বা বাণিজ্য চালানোর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে।

স্কিল-ভিত্তিক গেমস যেমন রামি, পোকার বা ক্যারামকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে একটি বৈধ ব্যবসায়িক কার্যকলাপকে থামানো যায় না। সুপ্রিম কোর্টের পুরনো রায় যেমন ‘চামরবাউগওয়ালা’ কেসে স্কিল গেমস এবং চান্স গেমসের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করা হয়েছে।

কিন্তু এই আইনের সেকশন ২(১)(গ) স্কিল বা চান্স যাই হোক, স্টেকস-ভিত্তিক সব অনলাইন গেমকে ‘অনলাইন মানি গেম’ বলে ঘোষণা করে এই পার্থক্যকে মুছে দিয়েছে। ২০২২ সালের কর্ণাটক হাইকোর্টের ‘অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন’ রায়ে অনুরূপ আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ স্কিল গেমস জুয়ার নয় এবং আর্টিকেল ১৯(১)(গ)-এর অধীনে সুরক্ষিত।

Advertisements

আরেকটি শক্তিশালী যুক্তি হলো আইনের অসমানুপাতিকতা। পিটিশনাররা দাবি করছেন, সরকারের উদ্বেগ যেমন আর্থিক ক্ষতি বা আসক্তি সমাধানের জন্য নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ (রেগুলেশন) আরও যুক্তিযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, KYC চেক, খরচের সীমা বা ভোক্তা সুরক্ষা যেমন ব্যবস্থা চালু করে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া, ডিজিটাল ফাইন্যান্সের মতো খাতে জালিয়াতির হার গেমিংয়ের চেয়ে বেশি হলেও সেখানে নিষেধাজ্ঞা নেই, শুধু নিয়ন্ত্রণ আছে।

এই আইন আর্টিকেল ১৪ (সমতার অধিকার) লঙ্ঘন করে, কারণ এটি অনলাইন এবং অফলাইন স্কিল গেমসের মধ্যে অসমান আচরণ করে। এছাড়া, আর্টিকেল ২১ (জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার) এবং ১৯-এর লঙ্ঘনও দাবি করা হয়েছে, কারণ এটি অস্পষ্ট এবং অতিরিক্ত বিস্তৃত। অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে পিটিশনাররা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা শিল্পকে ধ্বংস করে দেবে। অনলাইন গেমিং শিল্প ২০২৪ সালে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের ছিল, যা ২০২৯ সাল নাগাদ ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাত।

দিল্লি হাইকোর্টে এসডিপিআই সভাপতি এম কে ফয়জির জামিন আবেদনে ইডিকে নোটিশ

এটি ২ লক্ষের বেশি চাকরি এবং ৪০০-এর বেশি কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তারচেয়ে বড়কথা এই প্ল্যাটফর্মগুলি বার্ষিক ২০,০০০ কোটি ট্যাক্স আয় করে এবং ২৫,০০০ কোটির বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। ই-গেমিং ফেডারেশন, অল ইন্ডিয়া গেমিং ফেডারেশন এবং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ফ্যান্টাসি স্পোর্টসের মতো সংগঠনরা সতর্ক করেছে যে এটি ‘জব-ক্রিয়েটিং শিল্পের মৃত্যুদণ্ড’ হবে। ফলে, খেলোয়াড়রা অবৈধ অফশোর প্ল্যাটফর্মে চলে যাবে, যা আরও ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে।