দুই ভাইয়ের একজন স্ত্রী! আধুনিক ভারতে চলছে ‘দ্রৌপদী প্রথা’

হিমাচল প্রদেশের সিরমাউর জেলার শিল্লাই গ্রামের একটি অভিনব ঘটনা নজর কেড়েছে সবার (Draupadi Pratha)। এই গ্রামের বাসিন্দা হাট্টি সম্প্রদায়ের দুই ভাই, প্রদীপ নেগি এবং তাঁর…

Draupadi Pratha in himachal

হিমাচল প্রদেশের সিরমাউর জেলার শিল্লাই গ্রামের একটি অভিনব ঘটনা নজর কেড়েছে সবার (Draupadi Pratha)। এই গ্রামের বাসিন্দা হাট্টি সম্প্রদায়ের দুই ভাই, প্রদীপ নেগি এবং তাঁর ছোট ভাই কপিল নেগি, কুনহাট গ্রামের সুনীতা চৌহানের সঙ্গে একই সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ট্রান্স-গিরি এলাকায় এই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক মানুষ।

এই পলিঅ্যান্ড্রি বিয়ে, যেখানে একজন নারী দুই বা ততোধিক পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, ভারতে আইনত স্বীকৃত না হলেও হাট্টি সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি একটি প্রাচীন প্রথা হিসেবে জনপ্রিয়। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

   

পলিঅ্যান্ড্রি, যার শব্দগত উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘পলি’ (অনেক) এবং ‘অ্যানার’ (পুরুষ) থেকে, হিমাচল প্রদেশের সিরমাউর, কিন্নৌর এবং লাহৌল-স্পিতি জেলার কিছু গ্রামে এবং পার্শ্ববর্তী উত্তরাখণ্ডের কিছু অংশে এখনও প্রচলিত। এই প্রথা স্থানীয়ভাবে ‘জোডিদারান’ বা ‘দ্রৌপদী প্রথা’ নামে পরিচিত, যা মহাভারতের দ্রৌপদীর পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে বিবাহের কাহিনি থেকে উৎপন্ন।

হাট্টি সম্প্রদায়ের মতে, এই প্রথা পরিবারের সম্পত্তি অবিভক্ত রাখতে এবং পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখতে সহায়ক। যদি একজন স্বামীর কিছু ঘটে, তবুও পরিবার অটুট থাকে।প্রদীপ নেগি একটি সরকারি বিভাগে চাকরি করেন, আর তাঁর ছোট ভাই কপিল বিদেশে কর্মরত। এই ত্রয়ী জানিয়েছেন, তারা কোনো চাপ ছাড়াই এবং পরিবারের সম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হাট্টি সম্প্রদায়ের জন্য পলিঅ্যান্ড্রি শুধু একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নয়, বরং জীবনের অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একটি উপায়। সম্প্রতি হাট্টি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি (শিডিউলড ট্রাইব) মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, এবং তারা পলিঅ্যান্ড্রিকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।

তবে, আধুনিক মূল্যবোধ এবং শহুরে জীবনযাত্রার প্রভাবে এই প্রথা বর্তমানে অচল। হাট্টি সেন্ট্রাল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কুন্দন সিং শাস্ত্রী গত বছর সংবাদ মাধ্যমকে দওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, শিক্ষার প্রসার এবং শহরে কর্মসংস্থানের জন্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্থানান্তরের ফলে ‘জোডিদারান’ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হবে। তিনি বলেন, “আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই প্রথা টিকে থাকা কঠিন।

Advertisements

তরুণ প্রজন্ম শহরে চলে যাচ্ছে, এবং তাদের মধ্যে এই প্রথার প্রতি আগ্রহ কমছে।”যদিও ভারতের হিন্দু বিবাহ আইনের অধীনে পলিঅ্যান্ড্রি বৈধ নয়, তবুও উপজাতি সম্প্রদায়ের রীতিনীতি রক্ষার জন্য ভারতীয় আইনে কিছু বিশেষ বিধান রয়েছে। সিরমাউর জেলার সাম্প্রতিক এই পলিঅ্যান্ড্রি বিয়ে নিয়ে আইনজীবী রণসিং চৌহান বলেন, “এই প্রথা এই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে চলে আসছে।

হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্ট এটিকে ‘জোডিদার আইন’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ট্রান্স-গিরি এলাকার ১৫৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪৭টিতে হাট্টি সম্প্রদায়ের উপস্থিতি রয়েছে, এবং এই প্রথা পরিবারের ঐক্য এবং সম্পত্তি অবিভক্ত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমের উচিত এই প্রথাকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে না দেখে এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য বোঝা।”

ট্রান্স-গিরি এলাকার ১,৩০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে পলিঅ্যান্ড্রি এখনও একটি নিয়মিত ঘটনা। এই প্রথা হাট্টি সম্প্রদায়ের জন্য শুধু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নয়, বরং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার একটি অংশ।

শত্রুর পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেবে নৌসেনার বহরে যোগ দেওয়া আইএনএস নিস্তার

তবে, শিক্ষা এবং আধুনিক জীবনযাত্রার প্রভাবে এই প্রথার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই ঘটনা ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি অনন্য দিক তুলে ধরে, যা আধুনিকতার সঙ্গে সংঘাতের মুখোমুখি হলেও এখনও কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে।