জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (omar-mehbooba) এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (PDP) নেত্রী মেহবুবা মুফতির মধ্যে সিন্ধু নদী চুক্তি (ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি বা আইডব্লিউটি) এবং তুলবুল নেভিগেশন প্রকল্প নিয়ে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এই দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদ ঘটে, যা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে সম্প্রতি স্থগিত হওয়া সিন্ধু নদী চুক্তি এবং তুলবুল নেভিগেশন প্রকল্পের পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব।
ওমর আবদুল্লাহ কি বলছেন (omar-mehbooba)
ওমর আবদুল্লাহ (omar-mehbooba) তুলবুল নেভিগেশন প্রকল্প পুনরায় চালু করার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন, যা গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর সিন্ধু নদী চুক্তি স্থগিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উঠে এসেছে। তিনি বৃহস্পতিবার এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “উত্তর কাশ্মীরের উলার হ্রদে তুলবুল নেভিগেশন ব্যারেজের নির্মাণকাজ ১৯৮০-এর দশকে শুরু হয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তানের চাপে সিন্ধু নদী চুক্তির উল্লেখ করে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এখন যেহেতু চুক্তিটি ‘সাময়িকভাবে স্থগিত’ করা হয়েছে, আমি ভাবছি আমরা কি এই প্রকল্পটি পুনরায় শুরু করতে পারি।” তিনি (omar-mehbooba) আরও জানান, এই প্রকল্পটি ঝেলম নদীকে নৌযানের জন্য উপযোগী করবে এবং শীতকালে নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি।
আইপিএলে বড় ধাক্কা দিল্লির, তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে টানাপোড়েনে দল
মেহবুবা কি বলেছেন
তিনি ওমরের (omar-mehbooba) এই মন্তব্যকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” এবং “বিপজ্জনকভাবে উস্কানিমূলক” বলে সমালোচনা করেন। এক্স-এ এক পোস্টে তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনার পরিস্থিতি থেকে সবে দুই দেশ পিছিয়ে এসেছে। এমন সময়ে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর (omar-mehbooba) তুলবুল প্রকল্প পুনরুজ্জীবনের আহ্বান গভীরভাবে দুর্ভাগ্যজনক।
জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ নিরীহ প্রাণহানি, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং অপরিমেয় কষ্টের মাধ্যমে এই উত্তেজনার মূল্য চুকিয়েছে। এ ধরনের মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং বিপজ্জনকভাবে উস্কানিমূলক।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মানুষ দেশের অন্যান্য মানুষের মতো শান্তি প্রাপ্য। জলের মতো অপরিহার্য এবং জীবনদায়ী উপাদানকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুধু অমানবিক নয়, বরং এটি একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়কে আন্তর্জাতিক মাত্রা দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।”
ওমর আবদুল্লাহ তীব্র ভাষায় পাল্টা আক্রমণ
মেহবুবার এই সমালোচনার জবাবে ওমর আবদুল্লাহ (omar-mehbooba) তীব্র ভাষায় পাল্টা আক্রমণ করেন। তিনি মেহবুবাকে “সীমান্তের ওপারে কিছু লোককে খুশি করার” অভিযোগ তুলে বলেন, “আপনার সস্তা প্রচারের লোভ এবং সীমান্তের ওপারের কিছু লোককে খুশি করার অন্ধ আকাঙ্ক্ষার কারণে আপনি সিন্ধু নদী চুক্তিকে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের স্বার্থের উপর সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকার করছেন। আমি সবসময় এই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও করব।
এই অন্যায্য চুক্তির বিরোধিতা করা কোনোভাবেই যুদ্ধ উস্কানি নয়, বরং এটি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের নিজেদের জল ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঐতিহাসিক অবিচার সংশোধনের প্রচেষ্টা।”এই বিতর্কের পটভূমিতে উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত সরকার সিন্ধু নদী চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছিল, যা সম্প্রতি কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। তবে, মেহবুবা মুফতি এই পরিস্থিতিতে তুলবুল প্রকল্পের পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাবকে শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, এবং এই ধরনের প্রকল্প আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ওমর আবদুল্লাহ দাবি করেন
অন্যদিকে, ওমর আবদুল্লাহ (omar-mehbooba) দাবি করেন, সিন্ধু নদী চুক্তি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের জন্য “সবচেয়ে অন্যায্য দলিল” ছিল, যা তাদের নিজস্ব জলসম্পদ ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তিনি এই চুক্তির স্থগিতকরণকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যার মাধ্যমে তুলবুল প্রকল্পের মতো উন্নয়নমূলক কাজ পুনরায় শুরু করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্প শুধু নৌযানের জন্যই নয়, বরং শীতকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
এই বাকযুদ্ধ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। একদিকে ওমর আবদুল্লাহ (omar-mehbooba) উন্নয়ন ও স্থানীয় স্বার্থের কথা বলছেন, অন্যদিকে মেহবুবা মুফতি শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর জোর দিচ্ছেন। এই বিতর্ক কীভাবে এগিয়ে যায় এবং এর ফলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে কী প্রভাব পড়ে, তা আগামী দিনগুলিতে স্পষ্ট হবে।