জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (omar-abdullah) বুধবার সকালে সীমান্ত এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি জরুরি বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখার (LOC) কাছাকাছি এলাকার নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেন।
ওমর আবদুল্লাহর বক্তব্য (omar-abdullah)
ওমর আবদুল্লাহ (omar-abdullah) শ্রীনগরে সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষের ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাঁদের এখান থেকে পালিয়ে যেতে হবে না। জম্মু ও শ্রীনগরে স্কুল খোলা রয়েছে, যদিও শ্রীনগর বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে।” তিনি সীমান্ত এলাকার কিছু ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছেন বলে জানান, তবে বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন।
আবদুল্লাহ (omar-abdullah) আরও বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু পাকিস্তানকে তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। পহেলগাঁও হামলা আমরা ভুলিনি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতের এই পদক্ষেপ ছিল প্রয়োজনীয়, এবং এখন পাকিস্তানের উপর নির্ভর করে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বৈঠক
একই দিনে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, বিহার, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। এই বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নররাও উপস্থিত ছিলেন।
শাহ জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএসএফকে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মনোজ সিনহা নির্দেশ দিয়েছেন
এদিকে, মনোজ সিনহা সকালে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত জেলাগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি জেলা প্রশাসকদের দুর্বল এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে এবং তাঁদের থাকার ব্যবস্থা, খাদ্য, চিকিৎসা ও পরিবহন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। জয় হিন্দ!” সিনহা জানান, সরকার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
অপারেশন সিঁদুর পহেলগাঁও হামলার জবাব
এই উত্তেজনার পটভূমিতে রয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’, যা পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার (২২ এপ্রিল, ২০২৫) প্রতিশোধ হিসেবে বুধবার ভোরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালিয়েছে।
এই হামলায় জৈশ-ই-মোহাম্মদের বাহাওয়ালপুর সদর দপ্তর এবং লস্কর-ই-তৈয়বার মুরিদকে ঘাঁটি সহ মোট নয়টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক অবকাঠামো বা জীবনহানি এড়ানোর জন্য সাবধানে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
পহেলগাঁও হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। এই হামলার জন্য ভারত লস্কর-ই-তৈয়বা এবং পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করেছে। ওমর আবদুল্লাহ এএনআই-কে বলেন, “পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে, তার জবাব ভারতকে দিতেই হতো। এখন এটা আমাদের প্রতিবেশী দেশের উপর নির্ভর করে, তারা এই পরিস্থিতি কতটা বাড়াতে চায়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে পাকিস্তানকে প্রথমে তাদের অস্ত্র নামাতে হবে।”
ধোনির তরুণ ব্রিগেডের সামনে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে KKR ?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
অমিত শাহ দুপুর ২টায় সীমান্ত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিচালক এবং মুখ্য সচিবদের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। এই বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, বিহার, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ এবং লাদাখ ও জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নররা অংশ নেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল অপারেশন সিন্দুরের পর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা এবং সম্ভাব্য পাল্টা হামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
শাহ বিএসএফকে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে, এবং পাঞ্জাব ও রাজস্থানের সীমান্ত জেলাগুলোতে স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে কর্তারপুর করিডোরও একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদক্ষেপ
মনোজ সিনহা সকালে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত জেলাগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য একটি বৈঠক করেন। তিনি জানান, সরকার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। তিনি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। সিনহা বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও দেশজুড়ে সমর্থন
অপারেশন সিঁদুরের পর ৬০টিরও বেশি দেশ পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করেছে এবং ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই হামলাকে “যুদ্ধের কাজ” বলে নিন্দা করেছেন(omar-abdullah)।
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নেতারা অপারেশন সিন্দুরের প্রশংসা করেছেন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “নতুন ভারত শান্তি চায়, কিন্তু উসকানি দেওয়া হলে কঠোর জবাব দেবে।” শিবসেনা (ইউবিটি) নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছেন।
অপারেশন সিঁদুর ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং সীমান্তের ওপারে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ। ওমর আবদুল্লাহর (omar-abdullah) জরুরি বৈঠক এবং অমিত শাহের সীমান্ত রাজ্যগুলোর সঙ্গে সমন্বয় ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তবে, পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত শান্তি চায়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অটুট রয়েছে।