তফসিলি জাতি-উপজাতির ক্ষমতায়নে ‘ভুবনেশ্বর এজেন্ডা’-র ঘোষণা সংসদে

নয়াদিল্লি: তফসিলি জাতি (এসসি) ও তফসিলি উপজাতি (এসটি)-র কল্যাণ ও ক্ষমতায়নের প্রতি সংসদের অঙ্গীকার আবারও জোরালোভাবে ব্যক্ত করলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি ঘোষণা করেন,…

Om Birla Bhubaneswar agenda

নয়াদিল্লি: তফসিলি জাতি (এসসি) ও তফসিলি উপজাতি (এসটি)-র কল্যাণ ও ক্ষমতায়নের প্রতি সংসদের অঙ্গীকার আবারও জোরালোভাবে ব্যক্ত করলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি ঘোষণা করেন, “ভুবনেশ্বর এজেন্ডা” আগামী দিনে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ হয়ে উঠবে, যা ২০৪৭ সালের মধ্যে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক, সক্ষম ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই ভিশন সরাসরি অনুপ্রাণিত বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের স্বপ্ন ও ভাবনা থেকে।

কী বললেন ওম বিড়লা

ভুবনেশ্বরে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলন-তফসিলি জাতি ও উপজাতির কল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটিগুলির চেয়ারপার্সনদের বৈঠক এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিড়লা বলেন, এই দুই দিনের আলোচনাই পরিণত হয়েছে অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবন ও চিন্তার এক স্রোতে। তিনি জানান, এমন সংলাপ শুধু মতের বিনিময় ঘটায় না, বরং সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কার্যকরী নীতি নির্ধারণেও সহায়তা করে।

   

স্পিকার বলেন, “আমরা কেবলমাত্র তাদের কল্যাণেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নই, বরং চাই তাদের আত্মনির্ভর করে তুলতে। সংসদীয় কমিটিগুলির গঠনমূলক ভূমিকা থাকলে সমাজে বিস্তৃত পরিবর্তন আনা সম্ভব।”
ওম বিড়লা জোর দিয়ে বলেন, গণতন্ত্রের আসল শক্তি লুকিয়ে আছে সংবিধানিক সুরক্ষা এবং সরকারি নীতির কার্যকর প্রয়োগের মধ্যে। তাঁর মতে, সংসদীয় কমিটি শুধু সমালোচনার মঞ্চ নয়, বরং তা হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান—যা কল্যাণমূলক প্রকল্পের পর্যবেক্ষণ করে, বাজেট বরাদ্দ মূল্যায়ন করে, আইনগত অধিকার সুরক্ষিত রাখে এবং সরকারি তহবিলের অপব্যবহার ঠেকিয়ে শাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে।

আলাদা এসসি/এসটি কল্যাণ কমিটি গঠনের ডাক Om Birla Bhubaneswar agenda

লোকসভার স্পিকার আহ্বান জানান, যেসব রাজ্য বিধানসভায় এখনো আলাদা এসসি/এসটি কল্যাণ কমিটি গঠন করা হয়নি, তারা যেন অবিলম্বে সেই প্রক্রিয়া শুরু করে। কারণ, কেন্দ্রীয় স্তরের মতোই রাজ্য স্তরে সমন্বিতভাবে কল্যাণ প্রকল্পের কার্যকারিতা যাচাই করা জরুরি।

শিক্ষার ভূমিকা তুলে ধরে বিড়লা বলেন, শিক্ষা হলো প্রকৃত ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি। তাই কমিটিগুলির উচিত শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ গভীরভাবে মূল্যায়ন করা, যাতে এসসি ও এসটি সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ পায়। তাঁর মতে, শিক্ষা শুধু ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে না, বরং গোটা সমাজকেও শক্তিশালী করে।

তিনি আরও যোগ করেন, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও পেশাগত ক্ষেত্রে আজ এসসি/এসটি যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে। এটাই প্রমাণ করে যে, সুযোগ দেওয়া হলে এই শ্রেণির যুবক-যুবতীরাও সমানভাবে অগ্রগতি সাধন করতে পারে।

ভুবনেশ্বর এজেন্ডা

এই সম্মেলনের আলোচনার ভিত্তিতেই তৈরি হবে ভুবনেশ্বর এজেন্ডা—যা হবে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ কর্মপরিকল্পনা। এর লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার, যা এসসি/এসটি সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষাগত মানোন্নয়নে পথপ্রদর্শক হবে।

স্পিকার বলেন, “আলোচনা ও বিতর্ক আমাদের গণতন্ত্রে সামাজিক পরিবর্তনের চালিকা শক্তি। এই সম্মেলনে ভাগ করে নেওয়া চিন্তাভাবনাগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে ইতিবাচক রূপান্তর আনবে। সংসদীয় কমিটিগুলি বাবাসাহেব আম্বেদকরের ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারতের স্বপ্ন পূরণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।”

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ওড়িশার রাজ্যপাল হরিবাবু কাম্ভম্পাতি, রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী প্রবতী পারিদা, রাজ্যসভার উপ-চেয়ারম্যান হরিবংশ, লোকসভার এসসি-এসটি কল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন ফগগন সিং কুলস্তে, সংসদ বিষয়ক, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী মুকেশ মাহালিং, ওড়িশা বিধানসভার স্পিকার সুরমা পাধ্য এবং বিধায়ক ভাস্কর মাধেই।

Advertisements

তাঁরা প্রত্যেকেই সংসদীয় ও আইনসভার কমিটিগুলির ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করেন এবং জানান, নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্ল্যাটফর্মই প্রকৃত পরিবর্তনের চাবিকাঠি।

প্রথমবার দিল্লির বাইরে জাতীয় সম্মেলন

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই জাতীয় সম্মেলনের প্রথম আয়োজন হয়েছিল ১৯৭৬ সালে দিল্লিতে। পরবর্তীতে ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৮৭ এবং ২০০১ সালে এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলি দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের সংবিধানিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছে। তবে এই প্রথমবারের মতো দিল্লির বাইরে—ভুবনেশ্বরে—এমন একটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন হলো, যা নিজেই একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত।

সম্মেলনের শেষে এক যৌথ অঙ্গীকারে জানানো হয়, সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলি একসাথে কাজ করবে যাতে কল্যাণমূলক নীতিগুলি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং প্রকৃত সুবিধা পৌঁছায় সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের কাছে।

সম্মেলনের মূল থিম ছিল—“তফসিলি জাতি ও উপজাতির কল্যাণ, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সংসদীয় ও আইনসভার কমিটিগুলির ভূমিকা”।

ভুবনেশ্বর এজেন্ডার মাধ্যমে আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হবে ভারতের উন্নয়ন যাত্রার অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র। সংবিধানপ্রদত্ত অধিকারের সুরক্ষা থেকে শুরু করে শিক্ষায় সমান সুযোগ সৃষ্টি—এসসি ও এসটি সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নই হবে আগামী দিনের পথনির্দেশ।

Bharat: Lok Sabha Speaker Om Birla announced the “Bhubaneswar Agenda,” a roadmap inspired by Ambedkar’s vision to empower SC/ST communities by 2047. He emphasized the role of parliamentary committees in ensuring an inclusive, equitable society through education and effective policy implementation.