ভারতের তেল ও গ্যাস শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র (Oil Gas Prices)। যা এই খাতের কোম্পানিগুলির মুনাফার মার্জিনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের উপর পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কার্যকর হয়েছে, এবং এটি তেল ও গ্যাস শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং লাভের মার্জিন হ্রাসের কারণ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই পদক্ষেপ শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, যা ইতিমধ্যেই বিশ্ববাজারে তেলের দামের ওঠানামা এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কাজ করছে।
জিএসটি বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন ভূতাত্ত্বিক জরিপ, ড্রিলিং, এবং সম্পদ অনুসন্ধানের উপর প্রযোজ্য হবে। এই খাতে কাজ করা সংস্থাগুলি, যেমন ওয়েল অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ONGC), রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এবং অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানিগুলির জন্য এই কর বৃদ্ধি অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে।
বিশেষ করে, অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে, যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি এবং লাভের নিশ্চয়তা কম থাকে, এই কর বৃদ্ধি কোম্পানিগুলির জন্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, জিএসটি হার বৃদ্ধি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলির উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৫-৭ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই অতিরিক্ত ব্যয় কোম্পানিগুলি গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে, যার ফলে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, এবং সম্পর্কিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, ভারতের মতো মূল্য-সংবেদনশীল বাজারে, যেখানে জ্বালানির দাম রাজনৈতিকভাবেও স্পর্শকাতর বিষয়, কোম্পানিগুলি এই ব্যয় বৃদ্ধি সম্পূর্ণরূপে গ্রাহকদের উপর চাপাতে পারবে না।
ফলে, তাদের মুনাফার মার্জিন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন যে, এই জিএসটি বৃদ্ধি দেশের শক্তি নিরাপত্তা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার লক্ষ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত বর্তমানে তার জ্বালানি চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানির উপর নির্ভর করে। দেশীয় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে, যেমন হাইড্রোকার্বন এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি (হেলপ)।
কিন্তু জিএসটি বৃদ্ধির ফলে অনুসন্ধানের ব্যয় বৃদ্ধি পেলে, বেসরকারি বিনিয়োগ এই খাতে কমে যেতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে ভারতের তেল ও গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।এদিকে, তেল ও গ্যাস শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বাণিজ্য সংগঠনগুলি এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রি (এফআইপিআই) এক বিবৃতিতে বলেছে, “জিএসটি বৃদ্ধি শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতাকে দুর্বল করবে এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।” তারা সরকারের কাছে এই হার পুনর্বিবেচনা করে অনুসন্ধানের জন্য আগের ১২ শতাংশ হার বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলেও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলি দাবি করছে যে, এই কর বৃদ্ধি জ্বালানি দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র তেল কোম্পানিগুলির জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও ক্ষতিকর।
জ্বালানি দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে।” অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এই জিএসটি বৃদ্ধি রাজস্ব বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় এবং এটি অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।এই পরিস্থিতিতে, তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসায়িক কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে।
গঙ্গাবক্ষে ‘ঢেউ’! পুজোয় সফরের আগে জেনে নিন টিকিটের দাম ও সময়সূচি
কিছু কোম্পানি ব্যয় হ্রাসের জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপায় খুঁজছে, আবার কেউ কেউ বাজারে দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা বিবেচনা করছে। তবে, এই জিএসটি বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব শিল্পের প্রবৃদ্ধি এবং ভারতের শক্তি খাতের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা দেখার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। এই সিদ্ধান্ত শিল্প ও গ্রাহকদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সরকারের কৌশলের পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।