Terrorism: ধর্মীয় জলসা, যেখানে সাধারণত ধর্মীয় আলোচনা ও উপদেশ হয়, তা এখন নানান ধরনের ষড়যন্ত্রের পেছনে ব্যবহৃত হচ্ছে। গোয়েন্দাদের সূত্রে খবর, গ্রামীণ এলাকায় আয়োজিত বিভিন্ন জলসার মাধ্যমে জেহাদি সংগঠন তৈরির প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিশেষভাবে, সাদ রাদি ওরফে মোঃ সাব নামে এক ব্যক্তি এই ধরনের জলসায় জঙ্গি সংগঠনের বিস্তার ঘটানোর বার্তা প্রদান করছিল। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।
এই জলসাগুলিতে, বিশেষত মুর্শিদাবাদসহ একাধিক জেলার গ্রামীণ এলাকায়, খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, এই জলসাগুলিতে প্রচারিত বার্তা দিয়ে একটি সুগভীর জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, যার প্রভাব অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে তদন্তের নতুন দিগন্ত
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সাদ রাদি এবং তার সহযোগীরা এই জলসাগুলির মাধ্যমে নিজস্ব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছিল। এই জলসায় উপস্থিত থাকা লোকজনের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞাতভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছিল। বর্তমানে গোয়েন্দারা ওই জলসাগুলির ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন এবং সেগুলির মাধ্যমে আসল চিত্র উদঘাটন করার চেষ্টা করছেন।
এই ভিডিও ফুটেজগুলি সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে, এবং গোয়েন্দাদের ধারণা, এদের সাহায্যে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে আসতে পারে। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, এই জলসাগুলির মাধ্যমে একটি বিপজ্জনক সন্ত্রাসী শক্তি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
শাহিনুর ইসলামের গ্রেফতার ও চাঞ্চল্যকর তথ্য
এদিকে, গতকাল অসম থেকে এক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য শাহিনুর ইসলামকে গ্রেফতার করেছে আসাম পুলিশ। শাহিনুর ইসলাম, যিনি সাদ রাদির ডানহাত হিসেবে পরিচিত, জঙ্গি নিয়োগের কাজে সক্রিয় ছিল। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শাহিনুর ইসলামের কাজ ছিল অনলাইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা এবং নতুন সদস্য নিয়োগ করা। শাহিনুর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে খিলাফত প্রতিষ্ঠার বার্তা প্রচার করছিল।
গোয়েন্দারা আরও জানিয়েছেন, শাহিনুর ইসলাম হরিহর পাড়ায় অবস্থিত আব্বাস আলীর খারিজি মাদ্রাসাতেও যেতেন, যেখানে তিনি সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মাঝে জেহাদি সংগঠন গঠনের পাঠ দিতেন। শাহিনুরের গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে, যা গোয়েন্দাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিস্তার
গোয়েন্দাদের অনুমান, সাদ রাদি এবং শাহিনুর ইসলামের কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের নেটওয়ার্কের বিস্তার রোধ করতে গোয়েন্দারা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এ ধরনের কার্যক্রম কীভাবে বিস্তার লাভ করছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দাদের জন্য একটি বড় সতর্কতার সংকেত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্মীয় জলসার মতো সাধারণ আয়োজনগুলিকে যাতে এই ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার না করা হয়, সেজন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই পরিস্থিতি গোটা দেশে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও একবার উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, যদি সঠিকভাবে তদন্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে চিহ্নিত করে যথাসময়ে বন্ধ করা সম্ভব হবে।