ভুবনেশ্বর: দুর্গাপুজোর বিসর্জনে ধুন্ধুমার হওয়ার পর সোমবার সকাল থেকে থমথমে কটক। জারি করা হয়েছে কার্ফু (Curfew), বন্ধ ইন্টারনেট। শুক্রবার রাতে হাতি পোখরির কাছে কিছু স্থানীয় লোকজন বিসর্জন শোভাযাত্রার সময় উচ্চস্বরে গান বাজানোর আপত্তি জানানোর তুমুল সংঘর্ষ বাধে। কিছু লোক বাড়ির ছাদ থেকে পাথর, জলের বোতল ছুঁড়তে শুরু করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ঘটনায় ডিসিপি (DCP) খিলারি হৃষীকেশ জ্ঞানদেও সহ আহত হন প্রায় ২৫ জন। পরিস্থিতি শান্ত করতে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। কিন্তু তা অমান্য করে ফের রবিবার রাতে সংঘর্ষ বাধে। প্রশাসনিক আদেশ অমান্য করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP) আয়োজিত একটি মোটরসাইকেল র্যালির সময় নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়।
নিরাপত্তা কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা হিংস্র হয়ে ওঠে, যার ফলে পাথর ছোঁড়া, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। ঘটনায় আহত হন ৮ জন পুলিশকর্তা। এরপর রবিবার রাত ১০ টা থেকে কটক শহরে জারি করা হয় কার্ফু। বন্ধ কড়া হয় ইন্টারনেট। সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্যাপক র্যালি
রবিবার বজ্রকবাটি রোডে বিশাল মিছিল করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP), সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অপসারণের আহ্বান জানিয়ে বিতর্কিত স্লোগান দিতে থাকেন পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা। ঘটনায় কটক-জুড়ে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সংঘাত শুরু হয়। সংঘর্ষের প্রতিবাদে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সোমবার ১২ ঘন্টার কটক বনধের ডাক দিয়েছে। অবহেলার জন্য অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে পরিষদ। বনধ-কার্ফু মিলে সোমবার সকাল থেকেই থমথমে উড়িষ্যার কটক।
ব্যাপক নিরাপত্তা
শহরজুড়ে দশ কোম্পানি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শান্তি বজায় রাখতে দরগা বাজার এবং মঙ্গলবাগ সহ সংবেদনশীল এলাকায় পুলিশ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যরা পতাকা মিছিল করেছে।
শান্তির আহ্বান
মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং স্থানীয় বিধায়করা নাগরিকদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে কোনও আপস করা যাবে না,” দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মাঝি।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া
অশান্তি দমনে ওড়িশায় ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা এটিই প্রথম নয় – সম্বলপুর (২০২৩) এবং বালাসোরে (২০২৪) একই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ এখনও পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে এবং আরও সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করার জন্য সিসিটিভি এবং ড্রোন ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্যের উপরও কড়া নজর রাখা হচ্ছে।