রাজস্থানের চুরু জেলার রতনগড় থেকে গ্রেফতার করা হল বজরং সিং-নামে এক ব্যক্তিকে৷ যিনি এক সময় দেশের অত্যন্ত অভিজাত সন্ত্রাস দমন বাহিনী এনএসজি-তে কমান্ডো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দীর্ঘদিনের নজরদারির পর রাজস্থান পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (ATS) ও মাদকবিরোধী টাস্ক ফোর্স (ANTF) যৌথভাবে ‘অপারেশন গাঁজানে’ অভিযান চালিয়ে তার কাছ থেকে ২০০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বজরং সিং রাজ্যজুড়ে পরিচালিত গাঁজা পাচারের চক্রের মূল হোতা।
বিপুল পুলিশি নজরদারি ও দুই মাসের খোঁজ
IGP বিকাশ কুমার জানিয়েছেন, বজরং দুই মাস ধরে পুলিশের নজর এড়াতে ভুয়া মোবাইল আইডি ব্যবহার করছিল এবং প্রত্যন্ত এলাকায় লুকিয়ে ছিল। তার অবস্থান শনাক্ত করতে পুলিশ প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করেছে। অবশেষে, বুধবার রাতে তার গোপন বাড়িতে অপ্রত্যাশিত অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিএসএফ থেকে এনএসজি, অতঃপর অপরাধের পথে NSG Commando Drug Kingpin
দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেও বজরং সিং তার বিশাল দেহসৌষ্ঠ্য ও ফিটনেসের কারণে প্রথমে বিএসএফ-এ যোগ দেয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে থাকা অবস্থায় সে পাঞ্জাব, অসম, রাজস্থান, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সুরক্ষা ও মাওবাদী-সংক্রান্ত অপারেশনে অংশ নিয়েছিল। পরে দেশের সেরা সন্ত্রাস দমন বাহিনী এনএসজি-তে সাত বছর কমান্ডো হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বাই হামলার সময় তাজ হোটেল অভিযানে সে এনএসজি সদস্য হিসেবে সরাসরি অংশ নিয়েছিল।
রাজনীতির উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং অপরাধ জগতে প্রবেশ
২০২১ সালে এনএসজি থেকে অবসর নেওয়ার পর বজরং সিং রাজ্যের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়। তিনি তার স্ত্রীর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নাম দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু জয় পাননি। তবে রাজনীতির মাধ্যমে স্থানীয় রাজনৈতিক ও অপরাধী দুনিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হয়, যা পরে তাকে গাঁজা পাচারের বড় চক্রের মূল হোতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মাদক পাচারের বিশাল ব্যবসা
পুলিশ জানিয়েছে, বজরং সিং তেলেঙ্গানা ও ওডিশা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা রাজস্থানে পাঠাত। ২০২৩ সালে হায়দ্রাবাদে তাকে দুই কুইন্টাল গাঁজা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। স্থানীয় প্রভাব এবং পুরনো অপরাধী সংযোগকে কাজে লাগিয়ে সে গাঁজা পাচারের ব্যবসা পরিচালনা করত।
গ্রেফতারের পেছনের গোয়েন্দা অভিযান
গ্রেফতারির সময় পুলিশ তার রাঁধুনির সহযোগিতা নিয়েছিল। রাঁধুনি বজরং সিং-এর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য প্রদান করেছিলেন। এছাড়া, পুলিশ তার গোপন আস্তানা শনাক্ত করে এক সপ্তাহ ধরে সতর্ক নজরদারি চালায়। একজন প্রাক্তন কমান্ডো হওয়ার কারণে সরাসরি অভিযান ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তাই পুলিশ ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষণ করে নিরাপদে গ্রেফতার করে।
IGP বিকাশ কুমার বলেন, “বজরং সিং-এর গ্রেফতারি রাজস্থানের সন্ত্রাস-মাদক চক্রকে দুর্বল করার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এই অভিযান দীর্ঘ সপ্তাহের পরিকল্পনা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ফলাফল।”