কাশ্মীরের শ্রীনগরের নওগাম থানায় হঠাৎ বিস্ফোরণে (Police Station Blast) চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ প্রথমে জানিয়েছে, থানায় জব্দ করে রাখা আমোনিয়াম নাইট্রেট পরীক্ষা করতে গিয়ে আচমকাই সেটা বিস্ফোরিত হয়। এই বিস্ফোরণ কোনো জঙ্গি হামলা নয়, বরং পুরোপুরি দুর্ঘটনা বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনা কীভাবে ঘটল
১৪ নভেম্বর রাতে নওগাম থানার ভেতরে—বা খুব কাছের একটি ভবনে—ফরেনসিক দফতরের সঙ্গে পুলিশ মিলেই জব্দ করা বিস্ফোরক পদার্থ পরীক্ষা চলছিল। ঠিক সেই সময়ই প্রবল শব্দে বিস্ফোরণ হয়। থানার চারপাশ কেঁপে ওঠে, এলাকার লোকজন ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বাইরে দৌড়ে আসে।
পুলিশ জানিয়েছে, আমোনিয়াম নাইট্রেট অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতির। সামান্য শক বা তাপ লাগলেই সেটা বিস্ফোরিত হতে পারে। প্রাথমিক ধারণা, পরীক্ষার মাঝেই কোনো ভুল বা ত্রুটির জন্য ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে ঠিক কতজন আহত বা ক্ষয়ক্ষতি কতটা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে কি কোনো যোগ আছে?
এটা সরাসরি কোনো হামলা নয়—এটা পুলিশ বারবার বলছে। তবুও ঘটনাটি উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কারণ কয়েক দিন আগেই দিল্লির লালকেল্লার কাছে একটি গাড়ি বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হয়।
এরই মধ্যে নওগাম এলাকায় জাইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM)-এর পোস্টার পাওয়া যায়। সেখান থেকেই ধরা পড়ে এক হোয়াইট-কলার জঙ্গি মডিউল, যেখানে ডাক্তারসহ পেশাদার লোকজন জড়িত ছিল।
এদের অভিযানে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গা—ফরিদাবাদ, সাহারানপুর—থেকে মোট ২,৯০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। এত বিশাল পরিমাণে বিস্ফোরক পাওয়া যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
কেন এত বিপজ্জনক এই আমোনিয়াম নাইট্রেট?
আমোনিয়াম নাইট্রেট সাধারণত সার হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু এই রাসায়নিক ঠিকমতো না রাখলে বা একটু ভুল ব্যবহারে তা মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
আগেও বড় বড় দুর্ঘটনায় এই রাসায়িক ব্যবহৃত হয়েছে—ওকলাহোমা সিটির কুখ্যাত বিস্ফোরণ তার উদাহরণ। তাই থানায় এত বিপজ্জনক জিনিস রাখা, আর তা পরীক্ষার সময় বিস্ফোরণ হওয়া—এটা বড়সড় নিরাপত্তা ত্রুটি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এবার কী হবে—তদন্ত কোথায় দাঁড়িয়ে
থানার পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছে পুলিশ।
ফরেনসিক টিম জায়গাটা খতিয়ে দেখছে, বিস্ফোরণের উৎস কি শক, তাপ নাকি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া।
গোয়েন্দারা দেখছেন, কোনো জঙ্গি যোগ আছে কি না। অর্থাৎ, দুর্ঘটনার ছদ্মবেশে কেউ কিছু করার চেষ্টা করেছে কি না—তাও তারা খতিয়ে দেখছে।
পাশাপাশি আগে ধরা পড়া জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে এই ঘটনার কোনো মিল আছে কি না, তাও দেখা হচ্ছে।
#BREAKING: J&K Police Top Officials tell me that the massive blast at Nowgam Police Station around 11:20pm tonight happened when FSL team along with Police and Tehsildar were inspecting the large Ammonium Nitrate explosive which was confiscated earlier. Casualties in the blast.… pic.twitter.com/67U143jOFg
— Aditya Raj Kaul (@AdityaRajKaul) November 14, 2025
ঘটনার বড় প্রভাব
এই বিস্ফোরণ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—
1. থানার মতো জায়গায় এত বিপজ্জনক বিস্ফোরক সুরক্ষিত রাখা হয়নি কেন?
2. তদন্তে জব্দ করা বিস্ফোরক সামগ্রী সঠিক প্রটোকল মেনে সংরক্ষণ ও পরীক্ষা করা হয় কি না—সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
3. সমাজের ভিতর থেকে শিক্ষিত পেশাদার মানুষ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া—এটাই নতুন চিন্তার বিষয়।
নওগাম থানার বিস্ফোরণ জঙ্গি হামলার মতো না হলেও, এটি বড় ধরনের নিরাপত্তা ফাঁকির দিকটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। তদন্ত চলছে, কিন্তু এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে—জব্দ করা বিস্ফোরক ঠিকভাবে না রাখলে তা বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর প্রশাসনকেও পুরো প্রক্রিয়াটা নতুন করে ভাবতে হবে—নইলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।


