ফাঁস হল নওগাম বিস্ফোরণের আসল রহস্য

nowgam-police-station-accidental-blast-investigation-kashmir

শ্রীনগর: শুক্রবার গভীর রাতে নওগাম থানায় যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এক মুহূর্তে নয়জনের প্রাণ কেড়ে নিল, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কর্মকর্তাদের মতে, ফরেনসিক টিম যখন আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় (ফরিদাবাদ) থেকে আনা শেষ কয়েকটি বাক্সের রাসায়নিক নমুনা পরীক্ষা করছিল, তখনই অতিরিক্ত আলো ব্যবহার করাই বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisements

ঘটনাটি আতঙ্কের সৃষ্টি করলেও পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এটি কোনো জঙ্গি হামলা নয়। সম্পূর্ণটাই অ্যাক্সিডেন্টাল ব্লাস্ট, যা ঘটেছে অত্যন্ত সংবেদনশীল রাসায়নিক পদার্থ পরীক্ষা করার সময়। ঘটনার সময় রাত ১১টা ২০ মিনিট।

   

মাত্র 100 টাকায় শুরু Jio-র প্ল্যান, JioHotstar সাবস্ক্রিপশন একদম ফ্রি

পরীক্ষাধীন শেষ বাক্সগুলোতে ছিল তরল রাসায়নিকের মিশ্রণ—এসিটোফেনন , হাইড্রোজেন পারক্সাইড এবং সালফিউরিক অ্যাসিড। এই মিশ্রণ থেকেই তৈরি হতে পারে ভয়ংকর অস্থিতিশীল এসিটোন পারঅক্সাইড , যা সামান্য তাপ, আলো বা নড়াচড়াতেই বিস্ফোরিত হতে পারে।

ফরেনসিক দলের সদস্যরা তরলটি আরও স্পষ্টভাবে পরীক্ষা করতে আলোর তীব্রতা বাড়ান এবং ঠিক সেই জায়গায়ই ঘটে বিপর্যয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত আলো থেকে সৃষ্ট তাপ, সঙ্গে সালফিউরিক অ্যাসিডের ধোঁয়া, রাসায়নিককে অস্থিতিশীল করে তোলে। মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণে থানার অধিকাংশ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। আশপাশের বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঘটনাস্থল কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।

এর আগেই ৩৬০ কেজি বিপজ্জনক রাসায়নিক যার মধ্যে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট , পটাশিয়াম নাইট্রেট সহ একাধিক বিস্ফোরক তৈরির উপাদান দুই দিন ধরে স্যাম্পলিং চলছিল। তদন্তের মূল নথি নওগামে থাকায় সেখানেই রাখা হয়েছিল রাসায়নিকগুলি। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ প্রধান নলিন প্রচাত এবং জয়েন্ট সেক্রেটারি (কাশ্মীর) প্রশান্ত লোখান্ডে দু’জনেই এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি সম্পূর্ণ দুর্ঘটনা। কোনো জঙ্গি হামলার প্রশ্নই নেই। রাসায়নিক অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিল, সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়েও এমন বিস্ফোরণ অস্বাভাবিক নয়।”

Advertisements

নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৪৭ বছরের মোহাম্মদ শফি পর্রে পাড়ার জনপ্রিয় দর্জি। তাঁর আয়েই চলত পরিবার। তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজনীতিকরাও তাঁর বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়াও ছিলেন SIA ইন্সপেক্টর ইসরার আহমদ শাহ ২০১১ ব্যাচের একজন সৎ, নম্র এবং অধ্যবসায়ী অফিসার। পরিবারে রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই ছোট সন্তান এবং বৃদ্ধ বাবা-মাকে।

এই তদন্তের সূত্রপাত হয় বানপুরা, নওগামে পুলিশ-জওয়ানদের নামে হুমকির পোস্টার দেওয়ার ঘটনায়। সেই ঘটনার তদন্ত নিজে নেতৃত্ব দেন SSP ড. জি ভি সুন্দর চক্রবর্তী। সিসিটিভি ফুটেজ ধরে প্রথম ধরা পড়ে তিন যুবক আরিফ নিসার দার (ছদ্মনাম সাহিল), ইয়াসির-উল-আশরাফ এবং মকসুদ আহমদ দার (ছদ্মনাম শাহিদ)।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে আরও বড় নেটওয়ার্ক। ধরা পড়ে মৌলভি ইরফান আহমদ যিনি আগে প্যারামেডিক ছিলেন, পরে ইমাম। অভিযোগ, তিনিই চিকিৎসকদের র‍্যাডিকালাইজ করেছিলেন। সেই সূত্রেই তদন্তকারী দল পৌঁছায় ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে গ্রেফতার হয় দুই চিকিৎসক ড. মুজ্জাফর গণাই এবং ড. শাহীন সৈয়দ।

এবং উদ্ধার হয় বিশাল রাসায়নিক ভাণ্ডার—যা থেকেই শুরু বিস্ফোরক বিপর্যয়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই নেটওয়ার্কের মূল তিনজনের দল ড. গণাই, উমর নবি (লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণে মারা যাওয়া গাড়িচালক), এবং মুজ্জাফর রাথার (পলাতক)—একটি বৃহৎ সন্ত্রাস মডিউল গড়ে তুলেছিল।